Advertisement
০২ মে ২০২৪
Illegal Mining

বাঁধের মাটিতে অবাধে কোপ, প্রশাসন যেতেই যন্ত্র উধাও

ডাকাতিয়া খাল উপচে ফুরফুরা পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যা দীর্ঘদিনের সমস্যা। সম্প্রতি সেই খালের বাঁধের মাটি কাটার ঘটনায় স্থানীয় মানুষ শঙ্কিত।

ও

এ ভাবেই মাটি কাটা চলছিল ডাকাতিয়া খালের বাঁধে। নিজস্ব চিত্র dedipankar098@gmail.com

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  , দীপঙ্কর দে
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১০
Share: Save:

কোপ পড়ছে ডাকাতিয়া খালের বাঁধে। যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টর বোঝাই করে লোপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। জাঙ্গিপাড়ার ফুরফুরা পঞ্চায়েতের ধনপোতা গ্রামে এই কারবার নিয়ে হুগলি জেলা প্রশাসন ও গ্রামীণ পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, শাসকদলের মদতে জনৈক শেখ কুতুবুদ্দিন ও তার দলবল ওই কাজ করছে।

অভিযোগ উড়িয়েছে দু’পক্ষই। তবে সেখানে যে বেআইনি ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, শাসকদলের নেতৃত্বের বক্তব্যে স্পষ্ট। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন।

ডাকাতিয়া খাল উপচে ফুরফুরা পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যা দীর্ঘদিনের সমস্যা। সম্প্রতি সেই খালের বাঁধের মাটি কাটার ঘটনায় স্থানীয় মানুষ শঙ্কিত। তাঁদের অভিযোগ, শীতে শুকনো খালে কমপক্ষে ৩০টি ট্রাক্টর নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতভর মাটি কাটা চলছে অবাধে। এর ফলে বাধেঁর পাড় দুর্বল হচ্ছে। আগামী বর্ষায় বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন আর তৃণমূলের একাংশের মদতে এই সব চলছে। খালের মধ্যে দিয়ে রীতিমতো রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। রাতে ট্রাক্টরে করে অবাধে মাটি পাচার চলছে। কেউ বাধা দেওয়ার নেই।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, অভিযোগ পেয়ে গত বুধবার ভূমি দফতরের আধিকারিক ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় জাঙ্গিপাড়ার বিডিও অভিজিৎ দাসের নির্দেশে। বিডিও বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’

গত বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যন্ত্র দিয়ে খাল থেকে মাটি কাটা চলছে। দুপুরে ভূমি দফতরের আধিকারিকেরা ও পুলিশ যায়। তখন অবশ্য তাঁরা যন্ত্র দেখতে পাননি।

স্থানীয়েরা জানান, প্রশাসনের লোকেরা আসার আধ ঘণ্টা আগে যন্ত্রটি সরিয়ে নেওয়া হয়। এলাকাবাসীর দাবি, এর আগে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো ব্যক্তিকে মাটি-মাফিয়াদের হুমকি শুনতে হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন পৌঁছনোর কিছুক্ষণ আগেই মাটিকাটা যন্ত্র সরে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, তাঁদের আসার খবর মাটি কাটার সঙ্গে যুক্ত লোকজনের কাছে কি আগেই পৌঁছে গিয়েছিল?

জাঙ্গিপাড়া ব্লক ভূমি দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘ব্লক স্তরে আমরা মাটি কাটার অনুমতি দিতে পারি না। মাটি কাটার একমাত্র অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা আছে জেলা স্তরে। এ ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, দেখা হচ্ছে।’’ জেলা পুলিশের তরফেও জানানো হয়েছে, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কুতুবুদ্দিনের দাবি, ‘‘আমি মাটি কাটার যন্ত্র ভাড়ায় দিয়েছি। মাটি কাটায় কোনও ভাবে যুক্ত নই। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মোহন আদকের অভিযোগ, ‘‘ডাকাতিয়া খালের বাঁধের মাটি কেটে লোপাট হচ্ছে। প্রশাসন জানে না, এমনটা নয়। তৃণমূলের লোকজন যুক্ত আছে বলে প্রশাসন চোখ বুজে রয়েছে।’’ এ নিয়ে জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূল নেতা তমালশোভন চন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে বলেছি ওই এলাকায় বেআইনি মাটি কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। ওই অঞ্চলে মাটি কাটার ঘটনায় আমাদের দলের কেউ যুক্ত নয়। কুতুব আমাদের দলের কেউ নন। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।’’

প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, যে কোনও অভিযোগ এলেই তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও তা হবে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে, তার বা তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jangipara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE