E-Paper

‘বিধায়ক বয়কট’ রুনাদের, মঞ্চ গড়তে চান মনোরঞ্জন

সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে মনোরঞ্জনের সঙ্গে কার্যত বাক্‌যুদ্ধ বাধে রুনা এবং তাঁর স্বামী তথা সিজা কামালপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অরিজিৎ দাসের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৮
মনোরঞ্জন ব্যাপারী।

মনোরঞ্জন ব্যাপারী। —ফাইল চিত্র।

নয়া মোড় বলাগড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে! বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেন ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রীদের একাংশ। পাল্টা ‘দুষ্কৃতী হটাও, বলাগড় বাঁচাও’ ডাক দিয়ে মঞ্চ গড়ার কথা শোনা গেল বিধায়কের মুখে।

শুক্রবার সোমরায় একটি মাঠে আলোচনা করে বিধায়ককে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ছিলেন যুবনেত্রী তথা জেলা পরিষদের সদস্য রুনা খাতুন, প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অসীম মাঝি, ডুমুরদহ নিত্যানন্দপুর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ রায় বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের বর্ষীয়ান নেতা শিশির রায়-সহ অনেকে।

সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে মনোরঞ্জনের সঙ্গে কার্যত বাক্‌যুদ্ধ বাধে রুনা এবং তাঁর স্বামী তথা সিজা কামালপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অরিজিৎ দাসের। অভিযোগ, রুনা সম্পর্কে ফেসবুকে খারাপ শব্দ প্রয়োগ করেন মনোরঞ্জন। দ্রুত তিনি ওই পোস্ট তুলে নিলে এবং ওই শব্দ ব্যবহারের জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেও বিতর্ক থামেনি। ‘ব্যথিত’ রুনা পুলিশে অভিযোগ করেন। পুলিশ তদন্ত করছে।

অসীম বলেন, ‘‘বিধায়কের কু-কথায় আমরা দুঃখিত, লজ্জিত। তাঁর নানা বক্তব্যে দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাই ওঁকে এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ রুনা-অসীমরা জানান, শীঘ্রই বড় সভা করে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। এ ব্যাপারে দল কোনও নির্দেশ দিলে, সেইমতো পদক্ষেপ করা হবে।

বিধায়কের দাবি, ওই নেতানেত্রীরা বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, ‘‘ওই শব্দ প্রয়োগের জন্য আমি লজ্জিত। আমাকে চোর, ধর্ষক বলায় মাথা ঠিক থাকেনি। অনুতপ্ত হয়ে ফেসবুকে ক্ষমাও চেয়েছি। কিন্তু, ওঁদের কথার বিচার কে করবে?’’ এর পরেই তিনি মঞ্চ তৈরির ভাবনার কথা বলেন।

বুধবার রাতে জিরাটে বিধায়কের কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়। হামলা নিয়ে মনোরঞ্জনের অভিযোগের তির রুনা-অরিজিতের দিকে। অভিযোগ, বিধায়কের অনুগামী এক তৃণমূলকর্মীর বাড়িতেও হামলা হয়। ঘটনাপ্রবাহে শাসকদলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সরগরম। এই পরিস্থিতিতে ভাঙচুর হওয়া বিধায়ক কার্যালয় পাহারা দিয়ে চলেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বাহিনী নিয়ে জিরাটে রাস্তায় ছিলেন হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের ডিএসপি (ক্রাইম) দেবীদয়াল কুণ্ডু, স্থানীয় সিআই শ্যামল চক্রবর্তী, বলাগড়ের ওসি রাজকিরণ মুখোপাধ্যায়। যদিও ওই কার্যালয় ভাঙচুর নিয়ে লিখিত অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ দিনও বলাগড়ে আসেননি বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘বিধায়ক কার্যালয় যারা ভেঙেছে, তারা যত দিন মেরামত না-করবে, তত দিন ওই কার্যালয়ের সামনে চেয়ারপেতে মানুষকে পরিষেবা দেব।’’ রুনার দাবি, বিধায়কের লোকেরাই কার্যালয় ভাঙচুর করেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে না-পেরে তৃণমূল নেতৃত্ব পুলিশকে সেই কাজে নামিয়েছেন। বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘পুলিশ সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিতে পারে না। শাসকদলের কোন্দল সামলাতে রাস্তায় পড়ে থাকছে। যে পার্টি অফিস ভাঙচুর নিয়ে পুলিশে অভিযোগই হয়নি, তা আগলে বসে রয়েছে!’’ এ নিয়ে জনমানসেও প্রশ্ন উঠেছে। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশে সর্তকতার জন্যই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’’

দলের গোষ্ঠী-বিবাদ নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের অস্বস্তি বেড়েছে। শ্রীরামপুর-হুগলি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি অরিন্দম গুঁইনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুরো বিষয়টি দলের রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। তাঁরাই দেখছেন।’’ বিরোধীদের মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ পুলিশের কাজ করছে। অন্যায় হলে তারা কোনও দল না দেখেই ব্যবস্থা নেবে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে তো পুলিশ আর শাসকদল এক হয়ে যায়। ওদের মুখে সমালোচনা শোভা পায় না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Balagarh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy