জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছে কিশোরী। উদ্ধারের চেষ্টা এলাকাবাসীর। সোমবার খানাকুলের ধান্যগোড়ির শিবতলায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
ছবিটা এ বারেও একই।
অন্যত্র জল নামছে। কিন্তু বানভাসি আরামবাগ মহকুমার খানাকুল-২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতই সোমবারও ৮-১২ ফুট জলের তলায়। রূপনারায়ণ এ দিনও চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়েছে। ফলে, জমা জল নামার রাস্তা নেই। এ দিন এখানকার ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েতের ঘোড়াদহ শিবতলা সংলগ্ন এলাকার খালে তিন কিশোরী ভেসে গিয়েছিল। গ্রামবাসীরা দু’জনকে উদ্ধার করতে পারলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত বছর চোদ্দোর দিশা মাইতির খোঁজ মেলেনি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও তল্লাশিতে নামে।
এই ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানেরা জানান, এ পর্যন্ত জমা জল মাত্র দু’আড়াই ফুট নেমেছে। মাড়োখানা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ আব্বাস বলেন, “এলাকার সমস্ত জল রূপনারায়ণে পড়ে। রূপনারায়ণ ভর্তি থাকায় জল খুব ধীরে নামছে। পানশিউলি বাজার, হানুয়া, বনহিজলি, মাড়োখানা, ঢলডাঙা— সর্বত্রই প্রায় একমানুষ জল।”
জেলা সেচ দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পাল বলেন, “মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলস্তর প্রাথমিক বিপদসীমা থেকেও নেমে গিয়েছে। জল নেমেছে দামোদরেরও। পুরশুড়া এখন নিরাপদে। তবে রূপনারায়ণের জলস্তর চরম বিপদসীমার উপরে থাকায় খানাকুলের জল নামতে দেরি হচ্ছে।”
মহকুমার অন্যত্র জল নামতে থাকায় কঙ্কালসার রাস্তাঘাট সংস্কার ও পানীয় জলের কল শোধনের দাবি উঠছে। দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও-রা। জেলা সেচ দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপনবাবু জানান, হুগলিতে কোথাও দামোদরের বাঁধ ভাঙেনি। দ্বারকেশ্বর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীবাঁধের যে সব জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংস্কারের কাজও শুরু হবে।
তবে, এ দিন বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণের দাবি শোনা গিয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। আরামবাগ শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড এখনও জলমগ্ন। এ দিন সেখানে জল নিকাশি নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। ত্রাণ মিলছে না বলেও তাঁদের অভিযোগ। পুরপ্রশাসক স্বপন নন্দী বলেন, “জায়গাটা গামলার মতো হওয়ায় নিকাশি সমস্যা মেটেনি। তবে, ত্রাণের ঘাটতি নেই।”
খানাকুল-২ ব্লকের কুমারহাট গ্রামের সন্টু খাঁর অভিযোগ, “পাঁচ দিন হয়ে গেল জলমগ্ন আমরা। ঘরে রেশনের চাল ছাড়া চিঁড়ে-মুড়ি ইত্যাদি কোনও খাবার নেই। একগলা জল ঠেলে প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে পানীয় জল আনতে হচ্ছে।” মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক হেমন্ত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “ত্রাণ বিলিতে ঘাটতির অভিযোগ থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
এ দিন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের ৯টি পঞ্চায়েতেও জল কিছুটা নেমেছে। তবে, আমতা-২ ব্লকের ঝিকিরা পঞ্চায়েত নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ঝিকিরা পঞ্চায়েতের নতুন করে প্লাবিত হওয়া ছাড়া জেলায় সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy