E-Paper

মায়ের হাত ধরে ফর্ম দিচ্ছে ‘ছোট বিএলও’

হাওড়ার শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের রামরাজাতলা এলাকার বিক্রমশীলা অ্যাকাডেমির ৯৮ নম্বর বুথের মুচিপাড়া এলাকায় নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পারমিতা। তিনি সাঁকরাইলের বটতলা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০৩
সঙ্গী: বিএলও পারমিতা হালদারের সঙ্গে তাঁর ছেলে প্রিয়াংশু।

সঙ্গী: বিএলও পারমিতা হালদারের সঙ্গে তাঁর ছেলে প্রিয়াংশু। —নিজস্ব চিত্র।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফর্ম বিলি করার কাজ শুরু করেছেন বিএলও-রা। তবে, সেই কাজের দায়িত্ব পাওয়ার পরে একটাই ভাবনা কিছুটা থমকে দিয়েছিল স্কুলশিক্ষিকা পারমিতা হালদারকে। বাড়িতে দেখাশোনার কেউ নেই। তা হলে বছর পাঁচেকের সন্তানকে রেখে যাবেন কার কাছে? শেষ পর্যন্ত সেই ভাবনাকে পিছনে ফেলে শিশুপুত্রের হাত ধরেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করছেন রামরাজাতলা এলাকার মুচিপাড়ার বাসিন্দা পারমিতা।

হাওড়ার শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের রামরাজাতলা এলাকার বিক্রমশীলা অ্যাকাডেমির ৯৮ নম্বর বুথের মুচিপাড়া এলাকায় নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পারমিতা। তিনি সাঁকরাইলের বটতলা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। বাড়ি থেকে যে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। অন্য দিকে, তাঁর স্বামী পার্থ বসাকও ধূলাগড় এলাকার আর একটি স্কুলের শিক্ষক। ফলে সপ্তাহের ছ’দিনই সকাল ৯টার মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন দু’জনেই। এই শিক্ষক দম্পতির একমাত্র সন্তান প্রিয়াংশু একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কেজি ২-এর পড়ুয়া। সে-ও সকাল ৭টায় স্কুলে যায়, স্কুলের গাড়িতে চেপে ফেরে দুপুর ১টায়। তখন তাকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকেন এক পরিচারিকা। বিকেলে পারমিতা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলে তাঁর ছুটি হয়। কিন্তু ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ার পরে আর বিকেলের মধ্যে বাড়ি ফেরা হয়ে উঠছে না বিএলও পারমিতার। ফলে, ছেলেকে রাখবেন কার কাছে, সেই চিন্তাই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল।

তবে, শেষ পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান করে খুদে প্রিয়াংশুই। পারমিতা বলেন, ‘‘ও নিজেই আমার হাত ধরে বলে, আমার সঙ্গে ঘুরবে। ও এখন নিজেকে ‘ছোট বিএলও’ বলে। ওর উৎসাহ আমাকে সাহস জুগিয়েছে। এখন বিকেল থেকে ওকে নিয়েই বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফর্ম বিলি করছি। তবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিএলএ-রা অনেকটা সাহায্য করছেন।’’

ছুটির দিনে বাবা বাড়িতে থাকলেও মায়ের সঙ্গ ছাড়েনি প্রিয়াংশু। কারণ, এই কাজে বেশ মজা পেয়েছে সে। রাস্তায় কখনও ভোটারদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে, কখনও মায়ের শাড়ির আঁচলে মুখ লুকোচ্ছে। কখনও লোকজন জানতে চাইলেই গড়গড়িয়ে বলছে মায়ের মোবাইল নম্বর।

পারমিতা জানান, মুচিপাড়ার ৯৮ নম্বর বুথে ভোটার রয়েছেন ১০১৪ জন। সেখানে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফর্ম দেওয়া ছাড়াও কী ভাবে তা ভর্তি করতে হবে, তা-ও বোঝাতে হচ্ছে। অনেক সময়ে বাড়ির সামনে ডাকাডাকি করে কারও সাড়া মিলছে না। ফলে, সেই সব বাড়িতে ফের যেতে হচ্ছে ফর্ম দিতে। তাই সময়ে কাজ শেষ করতে রবিবার বেশি রাত পর্যন্ত ছেলেকে নিয়ে পাড়ায় ঘুরেছেন। আর তাতেই হয়েছে বিপত্তি। ঠান্ডা লেগে সোমবার থেকে জ্বর এসে গিয়েছে ছোট্ট প্রিয়াংশুর।

তবু দমে যেতে চায় না ‘ছোট বিএলও’। বরং মা-কে জানিয়েছে, জ্বর সেরে গেলেই ফের ফর্ম বিলি করতে বেরোবে সে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BLO Election Commission

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy