বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে উদ্ধার হল এক যুবকের অচৈতন্য দেহ। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বেলুড় এলাকার রাজেন শেঠ লেনে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম শুভঙ্কর বড়ুয়া (৪০)। মৃত যুবকের পাঁজরে ও গলায় গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে কালীপুজো থাকায় কাজের পরে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পাড়ায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েছিলেন শুভঙ্কর। তিনি একটি বিমা সংস্থার এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন। পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দূর সম্পর্কের একমামার সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে তিনি বাড়ি ফেরেন। পরিবারের দাবি, বাড়ি ফিরে আসার বেশ কিছু ক্ষণ পরে শুভঙ্করের কাছে একটি ফোন আসে। তার পরেই তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। কোথায় যাচ্ছেন, কে তাঁকে ডাকল, তা পরিবারের কাউকে তিনি জানাননি।
ওই যুবকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত গভীর হয়ে গেলেও শুভঙ্কর বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। শেষে মঙ্গলবার ভোরে যখন সকলে মিলে তাঁকে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন, তখনই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে, রাস্তার পাশে অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর পরেই খবর দেওয়া হয় বেলুড় থানায়। পরিবারের লোকজন তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে জি টি রোডের পাশে টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পরে দেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (নর্থ-২) আনন্দজিৎ হোড় বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে দেহের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। খুনের ঘটনা কিনা, তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলেই স্পষ্ট হবে।’’ ওই যুবকের পাঁজরে ও গলায় গভীর আঘাত দেখে তদন্তকারীদের সন্দেহ, খুনের আগে সম্ভবত তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়েছিল কারও। শুভঙ্করের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ তুলেছে পরিবার। মৃতের মামা সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘রাতে আমি নিজে ওকে বাড়ির সামনে নামিয়ে গিয়েছি। হঠাৎ রাতে কার ফোন এল যে, ওকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যেতে হল? আমরা পুলিশের কাছে এটা খুনের ঘটনা বলে অভিযোগ জানিয়েছি।’’
এ দিকে শুভঙ্করের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা পাড়া। স্থানীয় বাসিন্দা সুদেব পাল বলেন, ‘‘পাড়ায় ও নির্বিবাদী ভাল ছেলে হিসাবেই ও পরিচিত ছিল। কখনও কারও সঙ্গে ঝামেলা বা শত্রুতা ছিল না। কে বা কারা ওকে খুন করল, তা পুলিশের তদন্ত করে দেখা উচিত।’’
পুলিশ জানিয়েছে, এই রহস্য-মৃত্যুর তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এলাকার আশপাশের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফোনের কল লিস্ট খতিয়ে দেখে জানার চেষ্টা হচ্ছে, শেষ ফোনটা কার মোবাইল থেকে এসেছিল। তা হাতে এলেই এই মৃত্যু-রহস্যের জট খুলে যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)