অনিয়ম: পুরসভার জলের লাইন থেকে পাইপ দিয়ে জল ভরে নেওয়া হচ্ছে ট্যাঙ্কে। বুধবার, হাওড়ার শানপুরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
হোটেল, রেস্তরাঁ ও রাস্তার ধারের দোকানে বিক্রি হওয়া খাবারের গুণমান যাচাই করতে হাওড়ায় জেলা স্তরে একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। পানীয় জল বোতলবন্দি করার যে সব কারখানা ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে, সেগুলির বৈধতা খতিয়ে দেখারও দায়িত্ব বর্তেছিল ওই টাস্ক ফোর্সের উপরে। কিন্তু গত দু’বছরে কোভিডের জেরে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে ওই টাস্ক ফোর্স। আর সেই সুযোগে হাওড়া জুড়ে গজিয়ে উঠেছে অজস্র ছোট খাবারের দোকান ও বোতলবন্দি জলের কারখানা। অভিযোগ, অধিকাংশ খাবারের দোকান বা কারখানারই বৈধ কাগজপত্র নেই। পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের ‘নজরানা’ দিয়েই অবাধে চলছে ব্যবসা।
হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসকের (উন্নয়ন) নেতৃত্বে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সিএমওএইচ-২, এসিপি (সদর), ডিএসপি (ডিইবি), ফুড সেফটি অফিসার, হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক-সহ জেলার আরও কয়েক জন পদস্থ কর্তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল ওই টাস্ক ফোর্স। যাদের প্রধান কাজ ছিল, হাওড়ার বিভিন্ন হোটেল, রেস্তরাঁ, পাইস হোটেল ও খাবারের দোকানে হানা দিয়ে খাদ্যের গুণমান পরীক্ষা করা। সেই সঙ্গে জেলা জুড়ে যে অসংখ্য বোতলবন্দি পানীয় জলের কারখানা রয়েছে, সেগুলির বৈধতা ও জলের মান খতিয়ে দেখা। কিন্তু টাস্ক ফোর্সের কাজকর্ম দু’বছর ধরে প্রায় বন্ধ থাকায় জলের কারখানা বা খাবারের দোকান— কোথাওই কোনও রকম বিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
ওই টাস্ক ফোর্সের এক কর্তা বললেন, ‘‘সে সময়ে এমন অনেক কারখানার মালিককেই আমরা হাতেনাতে ধরেছিলাম, যাঁরা পাতকুয়ো বা পুকুরের জল তুলে বিধি মতো পরিশোধন না করেই বোতলে ভরে বিক্রি করতেন। কোভিডে আমাদের কাজ বন্ধ থাকায় অনেক কারখানাই ফের গজিয়ে উঠেছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, বালি থেকে সাঁকরাইল— হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এই বিস্তীর্ণ এলাকায় গত কয়েক বছরে বোতলবন্দি জলের শতাধিক কারখানা গজিয়ে উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভূগর্ভের জল তুলে বোতলে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, পুরসভার জলও ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে, সাঁকরাইল থানা এলাকায় পানীয় জল এখন প্রায় কুটির শিল্পের চেহারা নিয়েছে। যার জেরে খুব দ্রুত নেমে যাচ্ছে এলাকার জলস্তর। সাধারণ পাম্প দিয়ে তোলা যাচ্ছে না চাষের বা পানীয় জল।
হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, জল নিয়ে অনিয়মের এই বিষয়টি দেখার কথা প্রথমত, পঞ্চায়েত বা পুরসভার। কারণ, ওই দু’টি দফতরই ট্রেড লাইসেন্স দেয়। দ্বিতীয়ত,
মাটিতে নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রে বিধি না মানলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জেলা জলসম্পদ দফতরের। তৃতীয়ত,
জলের গুণগত মান মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক কি না, তা দেখবে স্বাস্থ্য দফতর। সব চেয়ে বড় কথা, উৎপাদিত জল পরীক্ষা করে ‘বুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস’ ছাড়পত্র না দিলে কোনও সংস্থাই তা বাজারে বেচতে পারে না।
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই মণ্ডল বললেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, গত দু’বছরে কোভিডের কারণে টাস্ক ফোর্স ঠিক মতো নজরদারি চালাতে পারেনি। তবে মাঝে মাঝে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকটি জল উৎপাদনকারী সংস্থাকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুরসভা-সহ প্রতিটি দফতরকেই সক্রিয় হতে হবে।’’ পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই জেলা স্তরে আলোচনা করা হবে। কারখানাগুলির ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy