Advertisement
E-Paper

হাওড়ার ‘পর্ন-চক্র, তরুণী নির্যাতন’: মূল অভিযুক্ত শ্বেতা গ্রেফতার! তার আগেই ধৃত পুত্র এবং নাবালিকা কন্যা

পর্নকাণ্ড এবং তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগে বুধবার দুপুরেই আরিয়ান খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতে গ্রেফতার করা হল আরিয়ানের মা শ্বেতা খানকেও। পাঁচ দিন ধরে লুকিয়ে থাকার পরে ধরা পড়লেন হাওড়ার পর্নকাণ্ডে অভিযুক্ত মা-ছেলে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৫ ২১:১২
(বাঁ দিকে) শ্বেতা খান এবং আরিয়ান খান (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) শ্বেতা খান এবং আরিয়ান খান (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পর্নকাণ্ড এবং সোদপুরের তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত শ্বেতা খানকেও গ্রেফতার করল পুলিশ। কলকাতার আলিপুর এলাকা থেকে বুধবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। দুপুরে শ্বেতাপুত্র আরিয়ান খানকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পাঁচ দিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরে অবশেষে মা-ছেলে দু’জনকেই পাকড়াও করলেন তদন্তকারীরা। দু’জনেই ধরা পড়েছেন কলকাতা থেকেই। গল্ফগ্রিন থেকে ধরা পড়েন আরিয়ান এবং রাতে আলিপুরে ভবানীভবনের কাছে একটি এলাকা থেকে ধরা পড়লেন তাঁর মা শ্বেতা।

শ্বেতার ছোট মেয়েরও খোঁজ পাওয়া গিয়েছে কলকাতাতেই। পুলিশ সূত্রে খবর, বছর তেরোর মেয়েকে এক পরিচিতের কাছে রেখে কোথাও গা-ঢাকা দিয়েছিলেন শ্বেতা। নিজের মোবাইল ব্যবহার করছিলেন না তিনি। কিন্তু অন্য কারও মোবাইল থেকে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। সেই ঘনিষ্ঠদের মোবাইল থেকে প্রাপ্ত তথ্য ‘ট্র্যাক’ করছিলেন হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, বারবার নিজের স্থান পরিবর্তন করছিলেন শ্বেতা। শেষ পর্যন্ত তদন্তকারীদের হাতে ধরা পড়লেন তিনি।

বুধবারই কলকাতার গল্ফ গ্রিন এলাকা থেকে আরিয়ানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রোডাকশন হাউস খুলে পর্ন ভিডিয়োর ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে মা-ছেলের বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের বাসিন্দা এক তরুণীকে দিনের পর দিন হাওড়ার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে আটকে রেখে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ। গত শুক্রবার লুকিয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে কোনও ভাবে তিনি পালিয়ে আসার পরই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে।

সোদপুরের তরুণীকে নির্যাতনের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে আরিয়ান এবং তাঁর মায়ের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পাঁচ দিন ধরে খোঁজাখুঁজির পরে আরিয়ানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতে তাঁর মা শ্বেতাকেও গ্রেফতার করা হয়। ধরা হয়েছে শ্বেতার নাবালিকা কন্যাকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় শ্বেতার মাকেও।

সূত্রের খবর আরিয়ান পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিযোগ উঠে আসার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। অন্যের ফোন থেকে গত দু’দিন আগে লুকিয়ে তাঁর সঙ্গে মায়ের কথা হয়েছিল। তবে মা কোথায় ছিলেন, তা সেই সময় তিনি জানতেন না বলেই দাবি আরিয়ানের।

ফ্ল্যাটে তল্লাশির অনুমতি

শ্বেতাদের বাঁকড়ার ফ্ল্যাটের বন্ধ দরজার পিছনেই অনেক রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের। ওই ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালাতে ইতিমধ্যে আদালতের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় ওই ফ্ল্যাটে বাইরে থেকে নতুন করে একটি তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন তদন্তকারীরা। তালা ঝোলানো হয়েছে শ্বেতাদের গ্যারাজ ঘরেও। অভিযোগ, ওই ফ্ল্যাটেই সোদপুরের তরুণীকে আটকে রেখে শারীরিক অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল। জানা গিয়েছে, তাঁকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় চাকরি দেওয়ার টোপ দিয়ে মাস ছয়েক আগে ডেকেছিলেন আরিয়ানই। সমাজমাধ্যমে আলাপ হয়েছিল তাঁদের। তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চাকরি দেবেন বলে তাঁদের মেয়েকে জোর করে পানশালায় কাজ করিয়েছিলেন আরিয়ান এবং তাঁর মা শ্বেতা। পরে পর্ন ভিডিয়োয় অভিনয় করানোর চাপ দেওয়া হত। রাজি না-হওয়ায় তরুণীকে অকথ্য অত্যাচার করেছেন মা-ছেলে।

রিপোর্ট তলব জাতীয় মহিলা কমিশনের

বর্তমানে সাগর দত্ত হাসপাতালের আইসিসিইউ-তে রাখা হয়েছে সোদপুরের তরুণীকে। পরিবার সূত্রে খবর, তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করে জাতীয় মহিলা কমিশন। তারা মঙ্গলবার রাজ্যের ডিজি রাজীব কুমারকে একটি চিঠি পাঠায়। তাতে বলা হয়েছে, তিন দিনের মধ্যে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ জমা দিতে হবে কমিশনকে। তা ছাড়া ‘নির্যাতিতা’র শারীরিক এবং মানসিক চিকিৎসার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করতে বলা হয়।

একসঙ্গে শিমলা-মানালি, দাবি আরিয়ানের

পুলিশ সূত্রে খবর, আরিয়ানের আইনজীবী দাবি করেছেন, তরুণীকে কোনও মারধর করা হয়নি। তরুণী বিবাহিতা। স্বামীর সঙ্গে তাঁর ঝামেলা চলত। এমনকি ধৃতের দাবি, ওই তরুণী তাঁকে বিয়েও করতে চাইছিলেন। কিন্তু তিনি বিবাহিতা। সন্তান রয়েছে। পাশাপাশি ধর্মও ভিন্ন। এ সব কারণে আরিয়ান তাঁকে বিয়ে করতে চাইছিলেন না। তখন স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদেরও ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তরুণী। সম্প্রতি তরুণীর সঙ্গে আরিয়ান ঘুরতে গিয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আরিয়ানের দাবি, “১০ দিন আগেই আমার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল। আমরা শিমলা, মানালি এবং দিল্লি ঘুরে এসেছি। সেই সময় তো কোনও দাগ ছিল না মুখে।” বাঁকড়ার ওই ফ্ল্যাটে তরুণীকে আটকে রাখা হয়নি বলেও দাবি তাঁর।

আরিয়ানের দাবি, ঘুরে আসার পরেই স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতে চাইছিলেন তরুণী। পুলিশকে তাঁর আইনজীবী জানান, ওই সময় স্বামীর সঙ্গে তরুণীর বচসা হয়েছিল এবং সম্ভবত তখনই তাঁর মুখে আঘাত করা হয়। সেই কারণেই তরুণীর মুখে দাগ হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি ধৃত তরুণের। তাঁর বক্তব্য, ওই অশান্তির পরে তরুণী তাঁদের বাড়িতে আসেন। তখন তাঁর মুখে বারবার চুল চলে আসার কারণে অসুবিধা হচ্ছিল। সেই কারণে শ্বেতা ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসা করেই চুল কেটে দেন।

পর্ন-যোগ অস্বীকার

পর্নকাণ্ডে ধৃত আরিয়ানের দাবি, তাঁরা কোনও পর্ন ভিডিয়ো বানাতেন না। তিনি বলেন, “এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমি মুম্বইয়ে এক জায়গায় কাজ করতাম। করোনার পরে ওখান থেকে আমি চলে আসি। এখানে আসার পর একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলি এবং একটি প্রোডাকশন হাউস তৈরি করি। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো নিজেদের টাকা দিয়ে তৈরি করে আমরা ইউটিউবে আপলোড করতাম। ভবিষ্যতে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ভাল ভাল কনটেন্ট দিয়ে ইউটিউব থেকে টাকা পয়সা আয় করার।”

Howrah arrest Howrah Police Sodepur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy