E-Paper

প্রৌঢ়-খুনের জট কাটেনি এখনও, নজরে যুবকের গতিবিধি

শুক্রবার সকালে গোলাবাড়ির অরবিন্দ রোডে একটি পাঁচতলা আবাসনের তেতলার ফ্ল্যাট থেকে অসীম দে (৬৩) নামে ওই প্রৌঢ়ের দেহ উদ্ধার করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ০৯:৩৫
অসীম দে।

অসীম দে।

হাওড়ার গোলাবাড়ির অরবিন্দ রোডের আবাসনে প্রৌঢ়কে খুনের ঘটনার জট ৭২ ঘণ্টা পরেও খুলতে পারেনি পুলিশ। প্রৌঢ়ের পরিবার খুনের অভিযোগ দায়ের করলেও তদন্তকারীরা তাঁর দেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না। তদন্তে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, সে জন্য রবিবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে, ময়না তদন্তের পরে মৃতের নখ ও চুলের নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে ঘটনার রাতে ওই ফ্ল্যাটে এক যুবকের যাতায়াতের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। ওই পরিবারের কাছে সম্পূর্ণ অচেনা ওই যুবকের খোঁজ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। ওই যুবকই প্রৌঢ়কে খুন করেছে, না কি তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন, তা নিয়ে রহস্য এখনও কাটেনি।

শুক্রবার সকালে গোলাবাড়ির অরবিন্দ রোডে একটি পাঁচতলা আবাসনের তেতলার ফ্ল্যাট থেকে অসীম দে (৬৩) নামে ওই প্রৌঢ়ের দেহ উদ্ধার করা হয়। ঘরের বিছানায় অবিন্যস্ত পোশাকে ওই প্রৌঢ়ের দেহ পড়ে ছিল। তিনি মল-মূত্রের মধ্যেই বিছানায় শুয়ে থাকায় প্রথমে মনে করা হয়েছিল, অসুস্থ হয়ে প্রৌঢ় মারা গিয়েছেন। তবে ওই ঘর থেকেই মেলে কিছু খাবারের অবশিষ্ট অংশ, পোড়া সিগারেটের ঠুকরো, কয়েকটি দেশলাই কাঠি। কিন্তু অসীমের পরিবারের তরফে দাবি, ওই প্রৌঢ়ের বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার রাতে যে খাবার পাঠানো হয়েছিল, তাতে ওই খাবার ছিল না। তিনি সিগারেটও খেতেন না।

এর পরেই পুলিশের সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। অসীমের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৩২ মিনিটে এক যুবক হাতে ব্যাগ নিয়ে লিফ্‌ট থাকা সত্ত্বেও সিঁড়ি দিয়ে উঠে, দরজা ঠেলে অসীমের ফ্ল্যাটে ঢোকেন। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি একই ভাবে দরজা খুলে, হাতে অন্য রঙের একটি ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যান। ওই প্রৌঢ় যে হেতু একা ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন, তাই এর মধ্যে তাঁর স্ত্রী চৈতালি দে বার বার ফোন করেও তাঁকে না পাওয়ায় আবাসনের এক প্রতিবেশীকে ফোন করে ওই ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। ওই ব্যক্তি অসীমের ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেখেন, অবিন্যস্ত পোশাকে বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। দেহে কোনও সাড়া নেই। সেই খবর পেয়েই ছুটে আসেন অসীমের মেয়ে সুনীতি দত্ত।

রবিবার সুনীতি বলেন, ‘‘এই ফ্ল্যাটটা আমার মামাবাড়ির দাদুর। এটা নিয়ে মামাদের সঙ্গে মাসির মামলা চলছে। তাই নিয়ম করে আমার বাবা-মা অথবা মাসি এখানে রাতে থাকেন। বাবাও তাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এসেছিলেন। কিন্তু যে ছেলেটিকে সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, তাঁকে আমরা চিনি না। তবে তিনি বাবার পরিচিত মনে হচ্ছে, না হলে বাবা দরজা খুলে রাখতেন না।’’ সুনীতির আরও দাবি, তাঁর বাবাকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। কারণ, প্রৌঢ়ের হাতে থাকা চারটি সোনার আংটি, মোবাইল ও লাল ব্যাগটি খোয়া গিয়েছে। তদন্তে নেমে তাই ওই যুবকের আসা-যাওয়ার বিষয়টি তদন্তকারীরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। ওই যুবকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা করেছে ঠিকই। কিন্তু, আমরা ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। সব দিক খোলা রেখে তদন্ত হচ্ছে। ওই রাতে ফ্ল্যাটে আসা যুবককে ধরতে পারলেই রহস্যের কিনারা হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy