E-Paper

হাওড়ার বস্তিতে আগুনের পিছনে কি অন্তর্ঘাত, প্রশ্ন বাসিন্দাদের

এ দিন ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে পোড়া বস্তির বাসিন্দা ও পুলিশকর্তাদের মনে যে প্রশ্নটা বার বার ঘুরপাক খেয়েছে, তা হল, সন্ধ্যার ওই সময়ে অধিকাংশ বস্তিবাসীই যখন বিভিন্ন কাজে ঘরের বাইরে ছিলেন, তখন আগুন লাগল কী ভাবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:০৫
An image of Fire

—প্রতীকী চিত্র।

কোথাও পড়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া খাট-বিছানার অংশ, আধপোড়া পাঠ্য বই। কোথাও পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া হাঁড়ি, ডেকচি। কোথাও আবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঝলসানো আনাজ, মুড়ির প্যাকেট। তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে পুরোপুরি ঝলসে যাওয়া দু’টি কদম গাছ। বুধবার দিনের আলো ফোটার পরে হাওড়ার ইছাপুর দক্ষিণপাড়ায় এমনই দৃশ্য দেখা গেল আগুনে ভস্মীভূত সর্বহারা বস্তিতে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আগুন লেগেছিল সেখানে।

তবে, এ দিন ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে পোড়া বস্তির বাসিন্দা ও পুলিশকর্তাদের মনে যে প্রশ্নটা বার বার ঘুরপাক খেয়েছে, তা হল, সন্ধ্যার ওই সময়ে অধিকাংশ বস্তিবাসীই যখন বিভিন্ন কাজে ঘরের বাইরে ছিলেন, তখন আগুন লাগল কী ভাবে? তা ছাড়া, উত্তুরে হাওয়া চলা সত্ত্বেও বস্তির দক্ষিণ দিকে লাগা আগুন কী ভাবে উত্তরের সমস্ত ঘরে ছড়িয়ে পড়ল? তা কি শুধু পরপর গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার কারণে, না কি অন্য কোনও কারণও আছে? এই প্রশ্নটিও পুলিশকে যথেষ্ট ভাবাচ্ছে। এ দিন দুপুরে তদন্তে আসে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল। তারা ধ্বংসস্তূপ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট এলেই আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাওড়ার ইছাপুরের ওই বস্তিতে আগুন লেগে পুড়ে যায় অন্তত ১০০টি ঘর। আক্ষরিক অর্থেই সর্বহারা হন সর্বহারা বস্তির পাঁচশোরও বেশি বাসিন্দা। আগুনের গ্রাসে ছাই হয়ে যায় তাঁদের জমানো টাকা, সোনাদানা থেকে জন্মের শংসাপত্র, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ বহু কিছু। হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘরহারা বাসিন্দাদের মঙ্গলবার রাতে ইছাপুরের যে স্কুলে রাখা হয়েছিল, সেখানে গিয়েই এ দিন সকাল থেকে তাঁদের ক্ষতির খতিয়ান সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই বাসিন্দাদের সেই রাত থেকেই খাবার, জল সব দেওয়া হচ্ছে।

এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বস্তির কয়েক জন বাসিন্দা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খোঁজার চেষ্টা করছেন, কোনও কিছু অক্ষত আছে কি না। এক দল গৃহহারা মহিলা ও শিশু করুণ চোখে তাকিয়ে পুড়ে যাওয়া আস্তানার দিকে। এরই মধ্যে টুম্পা পাত্র, জ্যোতি সাহানি, দুর্গা যাদবদের মতো কয়েক জন বাসিন্দা বস্তিতে আগুন লাগার পিছনে অন্তর্ঘাত আছে কি না, সেই প্রশ্ন তুললেন। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘আমরা যখন প্রায় সকলেই বিভিন্ন কাজে বস্তির বাইরে ছিলাম, তখন কী ভাবে আগুন লাগল? আগুন এত দ্রুত গোটা বস্তিতে ছড়ালোই বা কী ভাবে? কেউ লাগিয়ে দেয়নি তো?’’ এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে তদন্তে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া-সহ বিভিন্ন থানার আধিকারিকেরা। এক পদস্থ পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘কাল উত্তুরে হাওয়া দিচ্ছিল। তা সত্ত্বেও আগুন কী ভাবে দক্ষিণে না এগিয়ে উত্তরের সব ঘর পুড়িয়ে দিল? এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুধুমাত্র গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন এতটা ছড়িয়েছে বলে মনে হয় না।’’ প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া বলেন, ‘‘ফরেন্সিক তদন্ত হয়েছে। কী করে আগুন লাগল, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।’’

এ দিকে, এ দিন সর্বহারা বস্তির মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে হাওড়া পুরসভায় বৈঠকে বসেন পুর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘খুব দ্রুত বস্তির বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনও সাহায্য করছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah Slum Fire Accident Fire

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy