Advertisement
১৮ জুন ২০২৪
নির্বাচনী বিধির কারণে কাজ এখনও শুরু হয়নি
Dam Renovation Work

বর্ষার আগে বাঁধ সংস্কার নিয়ে উদ্বেগ

দ্বারকেশ্বর নদের ভাঙা বাঁধের পাশে রিভার পাম্প। গোঘাটের ভাদুর পঞ্চায়েতের মণ্ডলগাঁথি এলাকায়।

দ্বারকেশ্বর নদের ভাঙা বাঁধের পাশে রিভার পাম্প। গোঘাটের ভাদুর পঞ্চায়েতের মণ্ডলগাঁথি এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৪ ০৯:৫৩
Share: Save:

বর্ষার আগে, সাধারণত মার্চ মাস থেকেই আরামবাগ মহকুমার নদ-নদীর ভাঙা এবং দুর্বল বাঁধ চিহ্নিত করে সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ বার লোকসভা নির্বাচনের বিধি বলবৎ থাকায় সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি। নির্বাচনী বিধির মেয়াদ থাকবে আগামী ৪ জুন, ভোটের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত। তার পরে দুর্বল বাঁধ চিহ্নিত করে কতটা সংস্কার সম্ভব তা নিয়ে উদ্বেগে মহকুমার মানুষ। সেচ দফতরও।

চার নদ-নদী (দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর এবং রূপনারায়ণ) ঘেরা এই মহকুমায় শেষবার বন্যা হয়েছিল ২০২১ সালে। তার পর বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকল্পে এবং জেলার নিম্ন দামোদর সেচ বিভাগের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু এখনও মহকুমা যে নিরাপদ নয়, তা গত দু’বছরের প্লাবনেও মানুষ টের পেয়েছেন। গত দু’বছর কোথাও বাঁধ না ভাঙলেও নদ-নদীর বহু জায়গায় পাড় উপচে বা নদের সঙ্গে যুক্ত নিকাশি খাল বেয়ে প্লাবিত হয় মহকুমার প্রায় ৬৩টি পঞ্চায়েতই। শস্যহানি হয়। কিছু মাটির বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সমস্যা বিশেষ করে জল নিকাশি নিয়েই। বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকল্পে মহকুমার মধ্যে থাকা মুণ্ডেশ্বরী নদীর মোট ৩২ কিমি পলি তুলে নাব্যতা বাড়ানো হয়েছে। দামোদরের বাঁ দিকের বাঁধের ৩৯.২০ কিমির পারও বাঁধানো হয়েছে। এ ছাড়া, জেলা নিম্ন দামোদর সেচ দফতর থেকে দ্বারকেশ্বর এবং রূপনারায়ণ নদের পার ও বাঁধ মিলিয়ে মোট ১১৫ কিমির মধ্যে ‘ভাঙনপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত প্রায় ৪৫ কিমির আমূল সংস্কার করাও হয়েছে। কিন্তু আরামবাগের বানভাসি চেহারা থেকেই গিয়েছে।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এখনও অনেক কাজ বাকি। খানাকুল ২ ব্লকের ধান্যগোড়ির সুকান্ত বেরা, জগৎপুরের বিমল ঘোড়ুই, খানাকুল ১ ব্লকের পোলের শেখ কামালউদ্দিন প্রমুখের অভিযোগ, মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার জমা জল বিভিন্ন খাল বেয়ে খানাকুলের অরোরো খাল হয়েই রূপনারায়ণ নদে পড়ে। সেই অরোরো খালের শেষ প্রান্ত এখনও সংস্কার হয়নি। ফলে, সমস্ত নিকাশি জল আটকে খানাকুলের দু’টি ব্লকের ২৪টি পঞ্চায়েত এলাকা ভাসায়। একই রকম ভাবে মুণ্ডেশ্বরী নদী, দ্বারকেশ্বর ও রূপনারায়ণ নদের বাঁধ এবং পারও বেশ কিছু জায়গায় ভগ্নদশায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষরা। যেমন, খানাকুলের ঘোষপুর সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের রঘুনাথপুর, নরেন্দ্রচক, কুলাট, ধুলেকুন্ডু মিলিয়ে প্রায় ২ কিমি সংস্কার প্রয়োজন বলে জানান ঘোষপুরের প্রাক্তন প্রধান হায়দার আলি। ঠাকুরানিচকের কুঠিপাড়া থেকে সামন্তপাড়া পর্যন্ত ৬০০ মিটার বাঁধের ভগ্নদশা বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রধান
শীতল মণ্ডল।

কাজ নিয়ে আশঙ্কা সেচ দফতরেরও। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনী বিধির গেরোয় ‘আরামবাগ মাস্টার প্ল্যান’ প্রকল্পের আওতায় অরোরা খালের শেষ প্রান্তের ১২ কিলোমিটার সংস্কারের কাজটি কারিগরি অনুমোদন হয়ে পড়ে রয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলেও ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া যায়নি ওই খালেরই শেষ প্রান্ত খানাকুলের শশাখালিতে রূপনারায়ণ নদের সঙ্গে সংযোগ মুখের স্লুস গেট এবং সেতু নির্মাণের কাজটির। নির্বাচনী বিধি ওঠার পরবর্তী কম সময়ের মধ্যে বাঁধ সংস্কারেও অসুবিধা হবে। কারণ, বাঁধ মেরামতের কাজ জুন মাসের মধ্যে অনেকটা করে ফেলা হয়। জুন মাসের পর আমন চাষকে কেন্দ্র করে মাটি পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়। উপরন্তু বাঁধও শক্তপোক্ত হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arambagh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE