Advertisement
০২ মে ২০২৪
COVID19

সংক্রমিতদের স্বজন হয়ে উঠছেন বিজ্ঞানকর্মীরা

বাড়িতে লোকের অভাব থাকলে তাঁরাই বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। কী করে তা ব্যবহার করতে হবে, দেখিয়ে দিচ্ছেন।

রোগীর বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। — নিজস্ব চিত্র

রোগীর বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। — নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৭:১৬
Share: Save:

কোথায় মিলবে অক্সিজেন? হাসপাতালে ভর্তির পদ্ধতি কী? অ্যাম্বুল্যান্স কোথায় পাওয়া যাবে? শববাহী গাড়ি?

সকাল থেকে রাত। ঘনঘন বেজে উঠছে ফোন। তাতে ভেসে আসছে এমন নানা জিজ্ঞাসা। সুলুক-সন্ধান দিচ্ছেন ওঁরা। শুধু কী তাই? কারও বাড়িতে লোক না থাকলে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া, হাসপাতালে ভর্তি করানো, ছুটির পরে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া— সবেতেই ওঁরা আছেন। করোনা সংক্রমিত অসহায় পরিবারের স্বজন-বন্ধু হয়ে উঠছেন হুগলি জেলার এক দল বিজ্ঞানকর্মী।

প্রথম বারের মতোই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউকে প্রতিহত করতে নাগরিক সমাজের পাশে এ ভাবেই রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ব্যান্ডেল-মগরা বিজ্ঞান কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবন্ধুরা। চিকিৎসক তথা সংগঠনের সদস্য দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় জানান, সংক্রমিত অনেকেরই শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। তাঁদের পরিবারের তরফে যোগাযোগ করা হলে খোঁজ করে দেখা হচ্ছে, কোথায় অক্সিজেন রয়েছে। সেখানকার ঠিকানা বা ফোন নম্বর ওই পরিবারকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে লোকের অভাব থাকলে তাঁরাই বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। কী করে তা ব্যবহার করতে হবে, দেখিয়ে দিচ্ছেন। কোনও ক্ষেত্রে নিজেরা তা লাগিয়েও দিচ্ছেন রোগীর শরীরে। পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ওষুধপথ্যও। বাড়িতে পালস্‌ অক্সিমিটার না থাকলে, তা-ও দেওয়া হচ্ছে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কম হলে কোন অবস্থানে থাকলে মুক্তি মিলবে, শিখিয়েও দেওয়া হচ্ছে।

রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে হাসপাতালে বাড়ির লোক যেতে না পারলে তাঁরাই ‘মুশকিল আসান’। একই কারণে কয়েক জনের ক্ষেত্রে ছুটির পরে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। কোভিড রোগীর পরিবারের জন্য হেঁশেলও খুলেছেন এই বিজ্ঞানকর্মীরা। দুপুর এবং রাতের খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মগরা, ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া, চন্দননগর জুড়ে চলছে পরিষেবা।

সোমবার ১৮টি পরিবারের ৪৬ জনের রান্না হয়েছে। অভাবী পরিবারের থেকে খাবার বা ওষুধের দাম নেওয়া হচ্ছে না। সংক্রমিতের বাড়ি স্যানিটাইজ়ও করা হচ্ছে। শেষকৃত্যেও বাড়ানো হচ্ছে সাহায্যের হাত।

এ সবের পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ, সচেতনতা প্রচার চলছেই। করোনা রোগীদের সাহায্যার্থে কাজ করা ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’কে বেশ কিছু পিপিই কিট-সহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সদস্যা, স্কুলশিক্ষিকা শুভ্রা ভট্টাচার্য জানান, সবটাই চলছে করোনা-স্বাস্থ্যবিধি মেনে। রোগীর বাড়ি বা হাসপাতালে পিপিই পরে যাওয়া হচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত ৩২ জন মিলে এই কাজ করছেন। তাঁদের কেউ স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, কেউ গৃহবধূ। শিক্ষক-শিক্ষিকা বা অন্য পেশার লোক, অবসরপ্রাপ্তরাও আছেন। শুভ্রাদেবী এবং সুহাসকান্তি ভট্টাচার্য অক্সিজেন, অ্যাম্বুল্যান্স, হাসপাতালের শয্যার খোঁজখবর রাখছেন। রান্না হচ্ছে সুজাতা বিশ্বাসের বাড়িতে। সৌর, রাজু, পল্টা, পিন্টু, স্বপনেরা অন্যান্য কাজ করছেন।

বিজ্ঞান কেন্দ্রের সম্পাদক সন্দীপ সিংহ বলেন, ‘‘স্থানীয় লোকেরা অর্থ সাহায্য করছেন। বিদেশ থেকে এক পরিচিত ১০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। মলয় বসু নামে এক যুবকের স্ত্রী মারা গিয়েছেন করোনায়। আমরা তাঁদের পাশে ছিলাম। মলয়বাবুও অর্থ সাহায্য করেছেন। তিনি এখন আমাদের সহযোদ্ধা। যতদিন সমস্যা না মিটছে, এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।’’

মানবিকতার পথে নাগরিক সমাজকে ভরসা জুগিয়ে চলেছেন বিজ্ঞানকর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE