E-Paper

২৩ বছরে স্থায়ী নিয়োগ শূন্য, পুর পরিষেবা দেওয়া নিয়ে সঙ্কট হাওড়ায়

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভায় শেষ বার স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল ২০০০ সালে। তার পর থেকে গত ২৩ বছরে বাম ও তৃণমূল বোর্ডের আমলে তিন হাজারেরও বেশি অস্থায়ী পদে নিয়োগ হলেও সরকার অনুমোদিত সমস্ত পদ ফাঁকাই থেকে গিয়েছে।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০২
An image of Howrah Municipality

হাওড়া পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

এক দিকে পাঁচ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়ায় হাওড়া পুরসভায় কোনও নির্বাচিত বোর্ড নেই। অন্য দিকে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, শীঘ্রই বদলি হতে পারেন পুর কমিশনার থেকে শুরু করে ডেপুটি কমিশনারেরা। পাশাপাশি, ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরে রয়েছেন সরকার অনুমোদিত পদের অর্ধেকেরও কম প্রযুক্তিবিদ। ফলে, এক-এক জন প্রযুক্তিবিদকে সামলাতে হচ্ছে তিন থেকে চারটি বা তারও বেশি দফতর। এতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ তাঁরা। এত কিছুর উপরে আবার চলতি বছরেই অবসর নিতে চলেছেন আট জন প্রযুক্তিবিদ। সব মিলিয়ে গত ২৩ বছর ধরে কোনও স্থায়ী নিয়োগ না হওয়ায় হাওড়ায় পুর পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মরত আধিকারিক ও কর্মীরাই।

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, ওই পুরসভায় শেষ বার স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল ২০০০ সালে। তার পর থেকে গত ২৩ বছরে বাম ও তৃণমূল বোর্ডের আমলে তিন হাজারেরও বেশি অস্থায়ী পদে নিয়োগ হলেও সরকার অনুমোদিত সমস্ত পদ ফাঁকাই থেকে গিয়েছে। এ দিকে, ওই সময়কালে হাওড়া পুর এলাকার ৫০টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা বেড়েছে চার থেকে পাঁচ লক্ষ। কিন্তু পুরসভায় দক্ষ, স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হয়নি। আরও অভিযোগ, অস্থায়ী ভিত্তিতে যাঁদের নেওয়া হয়েছে, তাঁদের একাংশের কর্মদক্ষতা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

উল্লেখ্য, নাগরিক পরিষেবার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে যে কোনও পুরসভা মূলত সরকারি অফিসার ও প্রযুক্তিবিদদের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু অভিযোগ, গত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে হাওড়া পুরসভার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে যেমন অফিসার নিয়োগ করা হয়নি, তেমনই পুরসভার মেরুদণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরে স্থায়ী কর্মী না নিয়ে সেটিকে কার্যত পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ১৯৯৮ সালের আগে যেখানে হাওড়া পুরসভায় ৮৮ জন স্থায়ী প্রযুক্তিবিদ ছিলেন, সেখানে ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ২৫ জনে!

পু‌রসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এই বছরে আরও আট জন প্রযুক্তিবিদ অবসর নেবেন। ফলে সেই সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭ জনে। আগামী বছর আরও ছ’জন অবসর গ্রহণ করবেন। অর্থাৎ, ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর চলবে সাকুল্যে ১১ জন প্রযুক্তিবিদ নিয়ে। অন্য দিকে, রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, স্থায়ী পদে কর্মী নিয়োগ করা যাবে না। এই অবস্থায় প্রায় ১৮ লক্ষ নাগরিককে সুষ্ঠু পুর পরিষেবা দেওয়া কী ভাবে সম্ভব?’’

হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার জানান, বিল্ডিং, কর-মূল্যায়ন, পার্সোনেল, সাফাই, নিকাশি, লাইসেন্স, পার্কিং-সহ বিভিন্ন দফতরে প্রযুক্তিবিদের অভাবে এক-এক জন প্রযুক্তিবিদকে একাধিক দফতর সামলাতে হচ্ছে। এতে কোনও দফতরের কাজই ঠিক ভাবে হচ্ছে না। ওই কর্তা বলেন, ‘‘এই কারণে কাজে অনীহা দেখা দিয়েছে অনেকের। তার উপরে অবসরের পরের দিন থেকে পুরসভার সরকারি অফিসারদের কাছে গেলে তাঁরা ঠিক মতো সহযোগিতা করছেন না।’’

এ সবের মধ্যে চলতি বছরে লোকসভা ভোট থাকায় নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বদলি হতে পারেন পুর কমিশনার-সহ দুই ডেপুটি কমিশনার। গত আড়াই বছর ধরে দায়িত্ব সামলানো পুর প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভায় অবিলম্বে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ জরুরি। সেই সঙ্গে দক্ষ অফিসার ও কর্মীর প্রয়োজন। এর মধ্যে দীর্ঘ দিন দায়িত্বে থাকা পুর কমিশনারের মতো অফিসারেরা বদলি হলে পুরসভা পরিচালনায় সমস্যা হতে পারে। সেই সমস্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah Municipality Job Recruitment Staff Crisis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy