বহুতল আবাসনের ভিতরে আশ্রয় নেওয়ার ‘অপরাধে’ একাধিক কুকুরকে ধরে তাদের মুখ দড়ি ও তার দিয়ে বেঁধে শ্বাসরোধ করার পরে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল। আরও অভিযোগ, ওই সময়ে পরিকল্পিত ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল আবাসনের সমস্ত সিসি ক্যামেরা। এমনকি, প্রমাণ লোপাটের জন্য একটি মালবাহী গাড়ি করে দেহগুলি ফেলে দিয়ে আসা হয়েছে কয়েক কিলোমিটার দূরে।
গত রবিবার দুপুরে এমনই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার শালিমার এলাকার রবীন্দ্রনগর আবাসনে। সোমবার বিষয়টি জানতে পারেন আবাসনের সেই বাসিন্দারা, যাঁরা কুকুরগুলিকে নিয়মিত খাবার দিতেন। এর পরেই হুলস্থুল বেধে যায়। তাঁরা সকলে চেঁচামেচি শুরু করেন। যাঁরা কুকুরগুলিকে ওই রকম নির্মমভাবে মেরেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় বটানিক্যাল গার্ডেন থানায় বিষয়টি জানানো হয়। জানানো হয় একটি পশুপ্রেমী সংগঠনকেও।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আদিত্য হাজরা ও আশিস শর্মা নামে দুইযুবক জানান, আবাসনের বাসিন্দা এক ব্যক্তির নেতৃত্বে আরও চার-পাঁচ জন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের সামনেই যখন তিনটি কুকুরের মুখ তার দিয়ে বাঁধা হচ্ছিল, আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। ওঁরা অনেক জন ছিলেন বলে কিছু করতে পারিনি। সকলেই এই আবাসনের বাসিন্দা। কুকুরগুলির দেহ ওঁরাই ছোট মালবাহী গাড়িতে করে ফেলে আসেন।’’
আদিত্য জানান, কুকুরগুলির দেহ কোথায় নিয়ে গিয়ে লোপাটকরা হয়েছে, তা জানতে তিনি তাঁর এক প্রতিবেশীকে নিয়ে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করেন। সোমবার সকালে তাঁরা একটি কুকুরের দেহ আলমপুরে জাতীয় সড়কের ধারে জঙ্গলের মধ্যে মুখ বাঁধা অবস্থায় পান। অর্চনা চক্রবর্তী নামে আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা প্রতিদিন ওদের খাবার দিতাম। অসুস্থ থাকলে চিকিৎসকএনে দেখাতাম। এটা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না।’’
ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্য ঈপ্সিতা রায়। তিনি বলেন,‘‘আমরা একটি কুকুরের মুখ বাঁধাদেহ পেয়েছি ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে। শুনছি, আরও কয়েকটি কুকুরকে এ ভাবে খুন করা হয়েছে। পুলিশের কাছে আমরা অভিযোগ দায়ের করেছি।’’
কিন্তু প্রশ্ন হল, একটি আবাসনে বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হল কার অনুমতিতে? ওই আবাসনের অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ললিত টামপুরিয়া বলেন, ‘‘এটামারাত্মক অপরাধ হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাব।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)