জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় ফুটপথ দখল করে চলছে ব্যবসা। ছবি: তাপস ঘোষ।
এ বার অবৈধ দোকান সরানো নিয়েও চুঁচুড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব!
রাস্তা বা ফুটপাত দখল নিয়ে সম্প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন শহরে রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলা সদর চুঁচুড়া শহরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু না হলেও সম্প্রতি পুর-কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল রোডের অবৈধ দোকান সরিয়ে নেওয়ার নোটিস দেন। তাতে বলা হয়েছে, আজ, সোমবারের মধ্যে ওই সব দোকান সরিয়ে না নিলে পুরসভাই সেই কাজ করবে। তৃণমূল পরিচালিত হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার এই নোটিসের উল্টো সুর এলাকার বিধায়ক অসিত মজুমদারের গলায়!
বিধায়ক জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পুরসভার ওই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুরসভার বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া সময়সীমা অনুয়ায়ী কিছু হবে না। কলকাতা আর চুঁচুড়া এক নয়। এখানকার ব্যবসায়ীরা চুঁচুড়ার বাসিন্দা।’’ অসিতের সংযোজন, ‘‘আমি এখানকার বিধায়ক। জেলা পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। পুনর্বাসন ছাড়া এক জনকেও উচ্ছেদ করা যাবে না।’’
বিধায়কের সুরে সুর মিলিয়ে ব্যবসায়ীরাও পুনর্বাসনের দাবি জানাতে শুরু করেছেন। এই অবস্থায় চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন। রাস্তা দখলমুক্ত করতে এই মুহূর্তে ‘বড় পদক্ষেপ’ করতে গেলে সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের অনেকে।
পুরপ্রধান অমিত রায় অবশ্য এ সবে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বিধায়কের আপত্তি প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথার বাইরে আমি কারও কথার জবাব দিতে পারব না। এটা স্থানীয় ব্যাপার নয়। সারা রাজ্যেই দখলমুক্ত করার কাজ চলেছে। পাশের চন্দননগর পুরসভাও দখলমুক্ত করছে। কে কী বললেন, তা দেখার বিষয় নয়। মুখ্যমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা অক্ষরে-অক্ষরে আমরা পালন করার পক্ষে।’’ নোটিস দেওয়ার পাশাপাশি শহর জুড়ে অবৈধ দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকে প্রচারও করা হয়েছে পুরসভার তরফে।
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমীকরণে অসিত এবং অমিত বিপরীত গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত। ফলে, পুরসভার পদক্ষেপ নিয়ে বিধায়কের ভিন্ন মতে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ শাসক দলের গোষ্ঠীবিবাদ দেখছে। তৃণমূলের কোনও পক্ষই অবশ্য গোষ্ঠীকোন্দলের কথা স্বীকার করেনি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কোন এলাকা থেকে দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হবে, শনিবার মহকুমাশাসকের (চুঁচুড়া) সঙ্গে পুর-কর্তৃপক্ষের বৈঠকে তা ঠিক হয়েছে। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, বৈঠকে ঠিক হয়, সোমবারের পরে পুরসভা ও প্রশাসন যৌথ অভিযানে নেমে রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার অনুরোধ জানাবে। তাতেও কাজ না হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্রের খবর, এই অবস্থায় বিধায়কের মন্তব্য নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। তবে এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে তাঁরা রাজি হননি।
হাসপাতাল রোড, তোলাফটক, আখনবাজার, খড়ুয়াবাজার, পিপুলপাতি, ঘড়ির মোড় প্রভৃতি এলাকায় জবরদখলের অভিযোগ রয়েছে। দখলমুক্ত করে মানুষ ও যানবাহন চলাচলের পথ সুগম হয় কী না, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy