এমনিতেই দ্বারকেশ্বর নদে বোরো জলের ঘাটতি এবং যথাসময়ে ‘বোরো বাঁধ’ বাঁধা নিয়ে খানাকুল ১ ব্লকের ৪টি পঞ্চায়েত এলাকার চাষিদের ক্ষোভ থাকে। এ বার তাঁদের দাবি মতো জানুয়ারির শেষ দিকে তা বাঁধা হলেও উচ্চতায় এমনই কম যে রঘুনাথপুর এবং গুজরাটে ‘বোরো বাঁধ’ টপকে জল বেরিয়ে যাচ্ছে! খালে জল ঢুকছে না দেখে চাষিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ
শুরু হয়েছে।
খানাকুল-১ ব্লক এলাকার বোরো বাঁধগুলি বাঁধা হয় সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতি থেকে। তহবিল দেয় জেলা পরিষদ। ঘোষপুর পঞ্চায়েত এলাকার রঘুনাথপুর মৌজার চাষি শেখ কামালউদ্দিন, মিলন মালিক, কিশোরপুর ১ পঞ্চায়েতের গুজরাটের চাষি রবিন জানার অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতির তদারকির অভাবে ঠিকাদার সংস্থা আগের চেয়ে বাঁধের উচ্চতা প্রায় চার ফুটের বেশি কম করেছে। ফলে সমস্ত জল বাঁধ টপকে নদে বয়ে যাচ্ছে। ওই জায়গা দু’টিতে নদের সঙ্গে সংযোগ খালের স্লুস গেট পর্যন্ত জল না ওঠায় প্রায় দেড় হাজার বিঘা বোরো ধান চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে চাষিদের তরফে বোরো বাঁধ দু’টি যথাযথ উঁচু ও মজবুত করে বাঁধার দাবি করা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির কাছে। চাষিরা জানিয়েছেন, বন্যাপ্রবণ ব্লক এলাকায় আমন ধানের চাষ হয় না। আলু তুলে বোরো ধান চাষই ভরসা। জল পেলে তাঁদের সেচের খরচ কমত।
গ্রীষ্মকালীন এই ধান চাষে প্রচুর সেচ লাগে। বোরো জল না পেলে ব্যক্তিমালিকানার সাবমার্সিবল পাম্প থেকে জল কিনতে খরচ হয় বিঘা পিছু দু’হাজার টাকা বা তার বেশি। আপাতত, ওই দু’টি বোরো বাঁধের উপরে নির্ভরশীল চাষিরা বর্ষার পরে খালগুলিতে রয়ে যাওয়া জল পাম্পে তুলে ধান রোপণ শুরু করে দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সেচ দফতরের বাস্তুকারদের সঙ্গে যৌথ পরিদর্শন এবং জরিপের পরে খানাকুলের দু’টি ব্লকের ১২টি বোরো বাঁধের কোনটির কত উচ্চতা এবং প্রস্থ হবে— সেই সিদ্ধান্ত হয়। মুণ্ডেশ্বরী নদী এবং দ্বারকেশ্বর নদ মিলিয়ে খানাকুলের দু’টি ব্লকের ওই ১২টি বোরো বাঁধের ৩টি জেলা পরিষদ নিজেরা বাঁধে। জেলা পরিষদের এক বাস্তুকার বলেন, “জেলা পরিষদের তিনটি বোরো বাঁধের উচ্চতা ৬ মিটার এবং প্রস্থ ৬ মিটার। বাকি পঞ্চায়েত সমিতিরগুলি ৩ মিটার থেকে ৬ মিটার উচ্চতা ও প্রস্থ ৫ মিটার থেকে ৬ মিটার।”
খানাকুলের রঘুনাথপুর বোরো বাঁধটির নির্দিষ্ট করা উচ্চতা ৫ মিটার এবং গুজরাটের উচ্চতা ৪.২৫ মিটার। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে তা যথাযথ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির
এক বাস্তুকার।
অন্য দিকে ঠিকাদরদের বক্তব্য, অতীতে বোরো বাঁধ বাঁধায় তাঁদের অনেক টাকা বাকি। এ বার ব্লক প্রশাসনের অনুরোধে তাঁরা ছ’জন ঠিকাদার মিলে তহবিলের ব্যবস্থা করে কাজগুলি করেছেন। তড়িঘড়ি কাজ করতে গিয়ে ছোটখাট ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে বলে মানছেন তাঁরা, সংশোধন করা হবে বলেও জানিয়েছেন। তন্ময় খামরুই নামে এক ঠিকাদার বলেন, “শুধু বোরো বাঁধের কাজেই আমার গত ২০২০-২০২১ সালে ৮ লক্ষ টাকা এবং ২০২১-২২ সালে ৯ লক্ষ টাকা
এখনও পাইনি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)