Advertisement
E-Paper

ছেলের জ্বর, ডাক্তার দেখাতে দু’ঘণ্টা পার

ডাক্তারবাবু কোথায়? কোন দিকে গেলে তাঁদের দেখা মিলবে? বছর ছয়েকের ছেলেকে কোলে নিয়ে এমন ভাবে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছিলেন হাজরা বেগম নামে এক মহিলা। শেষমেশ ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়ে যখন বাড়ি ফিরলেন ওই মহিলা ততক্ষণে হাসপাতালেই দু’ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসা ব্যবস্থার এমনই দৃশ্য দেখা গেল শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০১:১৭
হাসপাতালে শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে হাজরা বেগম। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে হাজরা বেগম। নিজস্ব চিত্র।

ডাক্তারবাবু কোথায়? কোন দিকে গেলে তাঁদের দেখা মিলবে? বছর ছয়েকের ছেলেকে কোলে নিয়ে এমন ভাবে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছিলেন হাজরা বেগম নামে এক মহিলা। শেষমেশ ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়ে যখন বাড়ি ফিরলেন ওই মহিলা ততক্ষণে হাসপাতালেই দু’ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে চিকিৎসা ব্যবস্থার এমনই দৃশ্য দেখা গেল শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে।

এ দিন হাজরা বেগম জ্বরে আক্রান্ত ছেলে মেহবুব আলমকে নিয়ে এসেছিলেন এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। চিকিৎসকের জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় বললেন, ‘‘ছেলের জ্বর হয়েছে। ঘণ্টা দেড়েক ধরে হাসপাতালে বসে আছি। অথচ কোনও চিকিৎসক তাকে দেখেননি। বহির্বিভাগে চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়, এখানে জ্বরের রোগী দেখা যাবে না। বহির্বিভাগে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’’ তখন সেখানে উপস্থিত লোকজন তাঁকে সুপারের অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

অসুস্থ ছেলেকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় সুপারের অফিসের সামনে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের আটকে দেন। সেখানে বৈঠক চলছিল। উপায় না দেখে ছেলেকে নিয়ে দরজা ঠেলে সুপারের ঘরে ঢুকেও পড়েন ছেলেটির বাড়ির লোকজন। সেখানে চেঁচামেচি করেন তাঁরা। সেখান থেকে বেরিয়ে মহিলা বলেন, ‘‘আমাদের কথা ভাল করে শোনাই হ‌ল না।’’ কিছুক্ষণ পরে তাঁদের বলা হয়, বহির্বিভাগে চিকিৎসক এসেছেন। সেখানে গিয়ে চিকিৎসকের কাছে ক্ষোভ উগড়ে দেন শিশুটির বাড়ির লোক। দু’পক্ষের মধ্যে কার্যত বচসা বেধে যায়। চিকিৎসক জানান, তিনি অন্তর্বিভাগে অন্য রোগী দেখছিলেন। তাই বহির্বিভাগে কিছুক্ষণ ছিলেন না। এর পরে ওই চিকিৎসক শিশুটির চিকিৎসা করেন। ওষুধ লিখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকেই জ্বর এবং সর্দির ওষুধ নিয়েও বাড়ি ফেরেন মহিলা। বেরনোর সময় তিনি বলেন, ‘‘শ্রীরামপুরেই থাকি। সোমবার থেকে ছেলের জ্বর হয়েছে। চিকিৎসক দেখাতে এসে দু’ঘণ্টা সময় লাগবে, ভাবতে পারিনি।’’

কী বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? শিশু বিভাগের চিকিৎসক সুজয় সাহার বক্তব্য, ‘‘সকাল থেকেই বহির্বিভাগে রোগী দেখছিলাম। রোগী না থাকায় মাঝে অন্তর্বিভাগে গিয়েছিলাম একটি বাচ্চাকে দেখতে। আধ ঘণ্টা-পৌঁনে এক ঘণ্টা পরে বহির্বিভাগে ফিরে আসি। সেখানে ৫-৭টি বাচ্চা ছিল। ওদের চিকিৎসা করি।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বহির্বিভাগে রোগী না থাকলে বা কলবুক এলে অন্তর্বিভাগে তো যেতেই হবে। কিছু লোক এটা বুঝতে চান না।’’

হাসপাতাল সুপার কমলকিশোর সিংহের দাবি, ‘‘বৈঠকের মাঝে হঠাৎ করেই দু’জন লোক ঢুকে চেঁচামেচি জুড়ে দেন। আমি চিকিৎসক সুজয় সাহাকে ফোন করি। উনি অন্তর্বিভাগে ছিলেন। বহির্বিভাগে চলে যান।’’ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, হাসপাতালে কর্মীর অভাব আছে। বহির্বিভাগের সামনে কর্মী রাখা সম্ভব হয় না অনেক সময়। ‘হেল্পডেস্ক’ আছে অন্তর্বিভাগে। আর মাত্র পাঁচ জন রোগী সহায়ক আছেন। বহির্বিভাগে। তাই সেখানে এই পরিষেবা চালু করা যায়নি। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সুপার।

Walsh Hospital Doctors patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy