Advertisement
E-Paper

ভিন্‌রাজ্য থেকে ফিরল সাত শিশু

কারও বয়স তেরো, কারও বা পনেরো। কেউ পা দিয়েছে ষোলোয়। সকলেরই বাড়ি হুগলিতে। কিছুটা পড়াশোনা করে তারা সোনা-রুপোর কাজ শিখতে পাড়ি দিয়েছিল হায়দরাবাদে। শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০১:৫৩

কারও বয়স তেরো, কারও বা পনেরো। কেউ পা দিয়েছে ষোলোয়। সকলেরই বাড়ি হুগলিতে। কিছুটা পড়াশোনা করে তারা সোনা-রুপোর কাজ শিখতে পাড়ি দিয়েছিল হায়দরাবাদে। শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।

প্রশ্ন উঠছে, মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে কাজের খোঁজে তারা কেন ভিন্‌রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে?

পান্ডুয়ার আইমায় থাকে চোদ্দো মেহমুদ আলি। কয়েক মাস আগে তাকে সোনা-রুপোর কাজ করতে হায়দরাবাদে পাঠানো হয়। সেখানে তার মামাও একই কাজ করেন। তাঁর কাছেই সে থাকছিল। পনেরো বছরের শেখ সাবিরের বাড়ি চণ্ডীতলার খরসরাইতে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে স্কুল ছেড়ে দেয় সে। দাদা হায়দরাবাদে গয়নার কাজ করেন। মেহমুদের মতো তাকেও সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একই ভাবে সিঙ্গুরের বলরামবাটির শেখ জাহাঙ্গিরও চলে যায় ভিন্‌রাজ্যে।

পরিসংখ্যান বলছে, হুগলির চণ্ডীতলা, বড়া, সিঙ্গুর, হরিপাল, জাঙ্গিপাড়া, পান্ডুয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় কম বয়সে বহু ছেলে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে চলে যায়। হরিপালের জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ বলেন, ‘‘অনেক স্কুলেই ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রসংখ্যা অনেক কম। ছেলেদের ভিন্‌ রাজ্যে কাজে পাঠানোটা এর অন্যতম কারণ। ছাত্রীদের জন্য যেমন কন্যাশ্রী চালু করা হয়েছে, ছাত্রদের ক্ষেত্রেও তেমন একটা প্রকল্প করলে মনে হয় সুফল মিলতে পারে।’’ তারকেশ্বরের নূটবিহারী পালচৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌমেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারের ছেলেরাই সাধারণত ভিন্‌রাজ্যে কাজ শিখতে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বেড়াতে পাঠানোর নাম করে কাজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’ সৌমেশবাবুর অনুমান যে ভুল নয়, তা উদ্ধার হওয়া তিন কিশোরের কথায় স্পষ্ট। বাকিরা কাজ করতে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও তিনজন অবশ্য কাউন্সেলিংয়ের সময় দাবি করেছে, তারা হায়দরাবাদে বেড়াতে গিয়েছিল। সৌমেশবাবু মনে করেন, সরকারি ও স্কুলের উদ্যোগে অভিভাবকদের সচেতন করলে এই সমস্যা মিটতে পারে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, গত জানুয়ারি মাসে হায়দরাবাদ পুলিশ শিশু-শ্রমিকদের উদ্ধার করতে বিশেষ অভিযান (অপারেশন স্মাইল) চালায়। তাতেই হুগলির সাতটি ছেলে ধরা পড়ে। তাদের সেকেন্দ্রাবাদ চাইল্ড হোমে রাখা হয়। সেখান থেকে হুগলি জেলা চাইল্ড লাইন এবং চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার তাদের ফিরিয়ে এনে বারাসতের সরকারি হোমে রাখা হয়েছিল। পরে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির মাধ্যমে সকলকে বাড়িতে পাঠানো হয়। চাইল্ড লাইনের তরফে জানানো হয়, তাদের স্কুলে ভর্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অভিভাবকেরা। সত্যিই করা হচ্ছে কি না, নজর রাখা হবে। প্রয়োজনে সাহায্য করা হবে।

এক আধিকারিক জানান, শিশু শ্রমিকদের ফিরিয়ে এনে কিছু দিন আবাসিক হিসেবে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে ভাল হতো। চাইল্ড ওয়েলফেরায় কমিটির সদস্য শঙ্করী আচার্য চট্টোপাধ্যায়, চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর গোপীবল্লভ শ্যামল বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সচেতন করার চেষ্টা করা হবে।’’

children Anti-child labor campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy