Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

৫৮ বছরের নববধূকে নিয়ে বাড়ি ঢুকলেন ৭৮ বছরের বর, পুলিশের সাহায্যে

বর নতুন বৌকে নিয়ে বাড়ি ঢ়ুকতে চাইছে। কিন্তু বাড়ির দরজা আটকে দাঁড়িয়ে বাড়ির লোকেরা। বাধ্য হয়ে তাই পুলিশের শরণাপন্ন হওয়া। অবশেষে পুলিশের সাহায্যেই ৫৮ বছরের স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ঢুকলেন ৭৮ বছরের ক্ষুদিরাম বেইজ।

নবদম্পতি: বিয়ের পর ক্ষুদিরামবাবু ও দুর্গাদেবী। নিজস্ব চিত্র

নবদম্পতি: বিয়ের পর ক্ষুদিরামবাবু ও দুর্গাদেবী। নিজস্ব চিত্র

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ১০:০০
Share: Save:

বর নতুন বৌকে নিয়ে বাড়ি ঢ়ুকতে চাইছে। কিন্তু বাড়ির দরজা আটকে দাঁড়িয়ে বাড়ির লোকেরা। বাধ্য হয়ে তাই পুলিশের শরণাপন্ন হওয়া। অবশেষে পুলিশের সাহায্যেই ৫৮ বছরের স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ঢুকলেন ৭৮ বছরের ক্ষুদিরাম বেইজ।

রবিবার দুপুরে এমন ঘটনার সাক্ষী রইল আরামবাগের নৈসরাই। তবে চমকের এখানেই শেষ নয়। প্রতিবেশীরাই জানালেন, বছর দেড়েক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ক্ষুদিরামবাবুর স্ত্রী পদ্মাদেবী বেজ। স্ত্রীর মৃত্যুর পর বর্ধমানের বেড়াল গ্রাম থেকে অবিবাহিত শ্যালিকা দুর্গাদেবীকে বাড়িতে এনে রাখেন ক্ষুদিরামবাবু। দুর্গাদেবীরও বয়স হয়েছে। এ দিকে ক্ষুদিরামবাবুকেও ছেলে-বৌমারা যত্ন করছিল না বলে অভিযোগ। ক্ষুদিরামবাবু সিদ্ধান্ত নেন, যে শ্যালিকা দেখভাল করছে, তাঁকেই স্ত্রীর
মর্যাদা দেবেন।

কিন্তু ভাবলেই তো আর সব কাজ করা যায় না! ফলে প্রথম বাধাটা পেলেন ছেলেদের কাছ থেকে। তাঁরা কিছুতেই বাবার এই বৃদ্ধ বয়সে বিয়ে মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু এত সহজে হারার পাত্র নন ক্ষুদিরামবাবুও। তাঁর কথায়, ‘‘যে আমার খাওয়া-পরার দায়িত্ব নিয়েছে, সেই আমার স্ত্রী। তাঁকে সম্মানটুকু না দিই কী করে?’’

আরও খবর
‘হ্যাঁ, আমি পাথর ছুড়েছি, মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, জাতীয় ফুটবল টিমে খেলতে চাই’

পাশে পেয়েছিলেন প্রতিবেশীদেরও। ফলে মধুরেণ সমাপয়েৎ। রবিবার দুপুরে পড়শিরা সকলে একজোট বেঁধে গাঁটছড়া বেঁধে দিলেন ক্ষুদিরামবাবু আর দুর্গাদেবীর। সোলার মুকুট আর টোপর পড়ে মন্ত্র পড়ে সিঁদুর দান হল। হল শুভদৃষ্টি, মালা বদলও। বিয়ের মন্ত্রপাঠ করলেন স্থানীয় পুরোহিত বিকাশ ভট্টাচার্য। কিন্তু আবারও বাধা। নব দম্পতিকে বাধা দিলেন ক্ষুদিরামবাবুর ছেলে-বৌমারা। এ বার পুলিশে খবর দিলেন পড়শিরা। পুলিশ এসে নব দম্পতিকে বাড়িতে পৌঁছে দিলেন। তবে শুধু মুখে ফেরেনি পুলিশও। তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল মিষ্টি আর ঠান্ডা পানীয়।

বাবার বিয়েতে আপত্তি কেন ছেলেদের? পড়শিদের অভিযোগ, ‘‘বাবাকে ছেলেরা দেখে না। শুধু সম্পত্তি ভোগ করতে চায়। বাবা বিয়ে করলে সম্পত্তি ভাগ বাঁটোয়ারা হলে ভাগে কম পড়ে যাবে!’’ ক্ষুদিরামবাবুর ৪৪ বছরের ছেলে রামপ্রসাদ বেজের কথায়, ‘‘সম্পত্তি ভাগ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। বাবার এমন কাণ্ড তো লোক হাসানো। বাবাকে বলেছিলাম মাসিকে নিয়ে থাকো। শাঁখা-সিঁদুর পরানোর দরকার নেই।’’

ছেলেদের কথা কানেই তুলছেন না ক্ষুদিরামবাবু। পাশে স্ত্রীকে বসিয়ে হাসিমুখে তিনি বলেন, ‘‘কে কী বলল, আমার কিছু যায় আসে না। দুর্গাকে তার সম্মান দিতে পেরেছি, এতেই আমি খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Couple marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE