Advertisement
E-Paper

খুদেকে বাঁচাতে ঝাঁপ বালকের

রবিবার দুপুরে চুঁচুড়ার সিংহিবাগান এলাকার সাত বছরের অতনু দাস পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে শুধু তিন বছরের ওই শিশুটিকেই বাঁচাল না, ধড়ে প্রাণ ফেরাল তার মায়েরও। মৈনাক নামে ওই শিশুটির মা সবিতা দাস পুকুর পাড়ে বসে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন।

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
ত্রাতা: বাবার কোলে মৈনাক।

ত্রাতা: বাবার কোলে মৈনাক।

পুকুরে ডুব দিতে দিতে প্রৌঢ়া শুধু একবার চেঁচিয়ে বলেছিলেন, ‘‘পায়ে কিছু ঠেকল!’’ শোনামাত্র পাড়ে বসে থাকা তাঁর সাত বছরের নাতির ঝাঁপ। ছেলেটি সাঁতার জানে না। কিন্তু অকুতোভয়। পাড়ে তখন জোর হইচই। সেখানে বসে থাকা পাড়ারই একটি শিশু যে হঠাৎ বেপাত্তা!

রবিবার দুপুরে চুঁচুড়ার সিংহিবাগান এলাকার সাত বছরের অতনু দাস পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে শুধু তিন বছরের ওই শিশুটিকেই বাঁচাল না, ধড়ে প্রাণ ফেরাল তার মায়েরও। মৈনাক নামে ওই শিশুটির মা সবিতা দাস পুকুর পাড়ে বসে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন। উদ্ধারের পরে মৈনাককে চুঁচুড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা স্পষ্ট জানান, শিশুটিকে সময়মতো জল থেকে উদ্ধার করা না-গেলে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। কিন্তু উদ্ধারকারী যে সাঁতার না-জানা সাত বছরের এক বালক, এটা শুনে চমকে গিয়েছেন ওই চিকিৎসকেরাও। সিংহিবাগানে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে অতনুর উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের কথা।

অতনু অবশ্য বলছে, ‘‘দিদিমার কাছে গল্প শুনি, বিপদে পড়লে মানুষকে বাঁচাতে হয়। তাই তো জলে ঝাঁপ দিলাম। মনে হয়েছিল, ভাইটা কোনও ভাবে পাড় থেকে পড়ে গিয়েছে। ঝাঁপ দেওয়ার পরেই হাতে ওর মাথার চুল ঠেকল। টেনে তুলি।’’

অতনুর বাবা অসুস্থ। মা পরিচারিকার কাজ করেন। অতনু দিদিমা ঝর্নাদেবীর কাছেই বেশির ভাগ সময় থাকে। ঝর্নাদেবী মাছ বিক্রি করেন। অতনু তাঁকে সাহায্য করে। রবিবার দুপুরে কাজের শেষে দিদিমার সঙ্গে পুকুরে স্নান করতে যায় সে। পাড় থেকে ফুটকয়েক দূরে ঝর্নাদেবী যখন স্নান করছিলেন, অতনু পাড়ে বসেছিল। সবিতাও ছেলেকে পাড়ে বসিয়ে স্নান করছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখেন, পাড়ে ছেলে নেই। তারপরেই ওই কাণ্ড। শিশুটি কখন পুকুরে পড়ে গেল, তা কেউ দেখতে পাননি।

মায়ের পাশে অতনু ।

পাড়ের কাছে ওই জলে তিন বছরের শিশুটি ডুবে গেলেও অতনু ডোবেনি। সেখানে জলের গভীরতা কম ছিল। পাড়ার ভাইকে উদ্ধারের পরে দু’জনকে পাড়ে নিয়ে আসেন স্থানীয়েরা। ঝর্নাদেবী বলেন, ‘‘বাচ্চাটার যখন খোঁজ চলছে, তখনই আমার পায়ে কিছু ঠেকেছিল। বুঝতে পারিনি। শোনামাত্র নাতি ঝাঁপ দিল। তার পরেই দেখি, নাতি মৈনাককে তুলে ধরেছে!’’

সোমবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে মৈনাক। তার পর থেকে আর মায়ের কোল থেকে সে নামতেই চাইছিল না। সবিতা বারবার অতনুর খোঁজ নিচ্ছিলেন । তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেটা আমার কাছে ভগবানের মতো হয়ে রইল। ও না থাকলে কী যে হতো! আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভাবলে এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।’’

আর অতনু? পাড়ার সকলের কাছে সে এখন ‘বীরপুরুষ’!

—নিজস্ব চিত্র।

Drowning Atanu Das চুঁচুড়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy