Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

টোটো নিয়ে রাস্তায় শেওড়াফুলির সুচিত্রা

যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাধেন। এই প্রবাদকেই  সত্যি প্রমাণ করেছেন শেওড়াফুলির সুচিত্রা দাস। শেওড়াফুলি থেকে কখনও বৈদ্যবাটী, চাঁপদানি, কখনও আবার শ্রীরামপুর, রিষড়ায় টোটো নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন মাঝবয়সী এই মহিলা।

স্বনির্ভর: টোটো নিয়ে সুচিত্রা। নিজস্ব চিত্র

স্বনির্ভর: টোটো নিয়ে সুচিত্রা। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শেওড়াফুলি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৩
Share: Save:

যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাধেন। এই প্রবাদকেই সত্যি প্রমাণ করেছেন শেওড়াফুলির সুচিত্রা দাস। শেওড়াফুলি থেকে কখনও বৈদ্যবাটী, চাঁপদানি, কখনও আবার শ্রীরামপুর, রিষড়ায় টোটো নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন মাঝবয়সী এই মহিলা। পুরুষদের সঙ্গে টক্কর দিয়েই অলিগলিতে এগিয়ে চলেছে তাঁর টোটো। উদয়াস্ত খেটে বাড়ি ফিরছেন। তার রোজগারে চলছে সংসারও।

বছর ছেচল্লিশের সুচিত্রা থাকেন শেওড়াফুলি স্টেশনের কাছেই গাঙ্গুলিবাগানে। সবাই তাঁকে ‘বুড়িদি’ বলেই চেনেন। এমন পেশা বেছে নেওয়ার কারণ কী? ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র সন্ধ্যায় সাদামাটা দোতলা বাড়িতে বসে সে কথাই শোনাচ্ছিলেন বুড়িদি। স্বামী নিমাইবাবু এবং ছেলে রাজীব শেওড়াফুলি থেকে লাড্ডু আর শোনপাপড়ি কিনে কলকাতায় বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করেন। উপার্জন খুব বেশি নয়। সুচিত্রা বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছি। স্বামীকে প্রতি মাসে দেনা শোধ করতে হচ্ছে। তিনি পেরে উঠছেন না। ওঁর কষ্ট কিছুটা লাঘব করার জন্যই টোটো চালানোর সিদ্ধান্ত নিই।’’

যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। কিছু দিন আগে স্বামীর অনুমতি নিয়ে ব্যাঙ্ক-ঋণ আর সোনা বিক্রি করে কিনে ফেলেন। ছেলে-বৌমাও আপত্তি করেননি। বাড়ির কাজ, পুজো সেরে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ টোটো নিয়ে বেরোন। বাড়ি ফিরতে বেলা একটা-দেড়টা। রান্না-খাওয়া সেরে ফের চারটে নাগাদ বেরিয়ে পড়েন। সন্ধ্যার মুখে ফিরে আসেন। তখন ফের বাড়ির কাজ। সেই সময় ঘণ্টা দু’য়েক ছেলে টোটো নিয়ে বেরোন।

সুচিত্রার কথায়, ‘‘স্বামীর পাশে দাঁড়াতে পেরে খুব ভাল লাগছে। দিনে আড়াইশো থেকে সাড়ে তিনশো টাকা রোজগার হচ্ছে।’’ বাহির শ্রীরামপুর কালীতলায় তাঁর বাপের বাড়ি। তিনি জানান, সেখানকার স্থানীয় কাউন্সিলর পিনাকী ভট্টাচার্য টোটো কেনার ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। পিনাকীবাবু বলেন, ‘‘এই তল্লাটে সুচিত্রাই বোধ হয় প্রথম মহিলা টোটো চালক। অনেকের কাছেই উনি উদাহরণ হতে পারেন।’’

শ্রীরামপুরের কুমিরজলা রোডের বাসিন্দা সমীরকুমার মাঝির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়েকে মাহেশে পরীক্ষাকেন্দ্রে দিয়ে আসা এবং পরীক্ষা শেষে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন সুচিত্রা। সরকারি চাকুরে সমীরবাবু বলেন, ‘‘মেয়েরা যে সব কাজই পারেন, সেটা প্রমাণ করলেন।’’

সুচিত্রা জানান, অভাবের সংসারে পড়াশোনা শিখতে পারেননি। এক সময় দোকানে কাজ করেছেন। তরুণ বয়সে ভারোত্তোলন করেছেন। জেলা এবং রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছেন। পদক জিতেছেন। পনেরো বছর আগে ভারোত্তোলন ছেড়ে দেন। তবে, পদক, শংসাপত্র সবই সযত্নে রাখা।

স্ত্রী’র সম্পর্কে স্বামী নিমাইবাবুর গলায় শ্রদ্ধা। তাঁর কথায়, ‘‘ও যে ভাবে আমার পাশে দাঁড়াচ্ছে, তার জন্য আমি খুশি। আমি জানি, ও পারবে। বিশ্বাস করুন, সকলেই কিন্তু প্রশংসা করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toto Car Sheoraphuli Srirampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE