মেরামতির জন্য সবে একটি কামরাকে ক্রেনে ঝোলানো হয়েছে। তখনই ভিতর থেকে গোঙানির আওয়াজ। লিলুয়া ওয়ার্কশপের কর্মীরা প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। সম্বিৎ ফেরায় চিৎকার করে ক্রেনচালককে কামরাটি নামাতে বলেন। দরজা খুলে দেখা যায়, বাঙ্কে এক তরুণী প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। কামরায় তাঁর পোশাক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। জানানো হয় রেলের সিভিল ডিফেন্সকেও। বেলা দেড়টা নাগাদ সিভিল ডিফেন্সের মহিলা কর্মীরা অসুস্থ ওই তরুণীকে পোশাক পরিয়ে পাঠিয়ে দেন লিলুয়া রেল হাসপাতালে।
বুধবার দুপুরের এই ঘটনা কার্যত রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল। নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও দূরপাল্লার ট্রেনের প্রতিটি কামরায় কিছু পড়ে আছে কি না খুঁটিয়ে দেখার পরে দরজা বন্ধ করে সেটি কারশেডে পাঠানো হয়। সেখানে ফের যান্ত্রিক ব্যবস্থার পরীক্ষা হয়। কোনও কামরার মেরামতি প্রয়োজন হলে সেটি ওর্য়াকশপে যায়।
রেল সূত্রে খবর, যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ইআর-৯২৪৮৬ জিএস নম্বরের কামরাটি সোমবার সকাল থেকেই টিকিয়াপাড়া কারশেডে আলাদা করে রাখা ছিল। এ দিন ভোরে সেটি লিলুয়া ওয়ার্কশপে আনা হয়। ট্রেনটি হাওড়া স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার সময়েই যদি ওই তরুণী কোনও ভাবে কামরায় থেকে গিয়ে থাকেন, তবে কারশেডে পরীক্ষার সময়ে রেলকর্মীদের চোখে পড়ার কথা। প্রশ্ন হল, এ ক্ষেত্রে কেউ তাঁকে দেখতে পেলেন না কেন? কী করেই বা ওই তরুণী কারশেডের মত অতি সুরক্ষিত জায়গায় ঢুকে পড়লেন? এ ক্ষেত্রে নাশকতার জন্য কোনও শক্তিশালী বিস্ফোরক যদি কামরায় রাখা হত, তা হলে কি তা-ও নজর এড়িয়ে যেত?
হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার মেহমুদ আখতার বলেন, ‘‘ওই তরুণী কী করে ওই কামরায় এলেন বলতে পারব না। কারশেড ও ওয়ার্কশপের নিরাপত্তার দায়িত্ব আরপিএফের। বেলুড় জিআরপি ঘটনাটির তদন্ত করছে।’’ কিছু বলতে পারছেন না রেলের কর্তারাও। রেল সূত্রে খবর, মেরামতির সময় হয়ে যাওয়ায় ওই কামরাটিকে ওয়ার্কশপে পাঠানো হয়। ঘটনার পর রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর থেকে শুরু করে আরপিএফ সবাই দায়িত্ব এড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। রাতে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। কী করে ওই তরুণী ভিতরে থেকে গিয়েছিলেন তদন্ত চলছে।’’
লিলুয়া আরপিএফের দায়িত্বে থাকা আইসি প্রিয়রঞ্জন বলেন, ‘‘কী করে ওই তরুণী কামরায় ঢুকে পড়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা হবে।’’
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, ওই অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীকে এ দিন সন্ধ্যাতেই লিলুয়া রেল হাসপাতাল থেকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষাও হবে। তাঁর সঙ্গে এখনও কথা বলা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy