Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পরিচয় ভুলে রাবড়ি গ্রাম নামেই খুশি আঁইয়া

‘পকেটে পয়সা থাকলেই, রাবড়ি খাবেন’— শিবরাম চক্রবর্তী।রাবড়ির প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা বারবারই প্রকাশ করেছেন শিবরাম। রাবড়ির স্বাদে আপ্লুত হননি এমন বাঙালিও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর এটা যে স্রেফ কথার কথা নয় তার প্রমাণ, আস্ত একটা গ্রামের নামই মানুষের মুখে বদলে গিয়েছে রাবড়ির জন্য।

পাক: কড়ার গা থেকে রাবড়ির জন্য তুলে নেওয়া হচ্ছে সর। ছবি: দীপঙ্কর দে।

পাক: কড়ার গা থেকে রাবড়ির জন্য তুলে নেওয়া হচ্ছে সর। ছবি: দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চণ্ডীতল‌া শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭ ০৩:২৫
Share: Save:

‘পকেটে পয়সা থাকলেই, রাবড়ি খাবেন’— শিবরাম চক্রবর্তী।

রাবড়ির প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা বারবারই প্রকাশ করেছেন শিবরাম। রাবড়ির স্বাদে আপ্লুত হননি এমন বাঙালিও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর এটা যে স্রেফ কথার কথা নয় তার প্রমাণ, আস্ত একটা গ্রামের নামই মানুষের মুখে বদলে গিয়েছে রাবড়ির জন্য।

হুগলির চণ্ডীতলা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম আঁইয়া। এলাকায় গিয়ে ওই নাম বললে অনেকেই ভ্রূ কোঁচকাবেন। তবে রাবড়ি গ্রাম বললে সঙ্গে সঙ্গেই দেখিয়ে দেবেন আঁইয়ার রাস্তা। ভোর থেকেই গ্রামের প্রতিটি ঘরে জ্বলে ওঠে চুলা। বিশাল বিশাল কড়ায় দুধ ঢেলে ফোটানোর কাজ শুরু হয়। চলে দিনভর। রাতেও বিরাম নেই। দুধ ফুটে ফুটে কখন ঘন হবে, চলে তার প্রতীক্ষা। সেই সঙ্গে চলতে থাকে হাতপাখার বাতাস। হাওয়া পেয়েই ঘন দুধে মোটা সর পড়ে। সেই সর কেটে কড়ার গায়ে লেপ্টে দেওয়া হয়। এ ভাবে চলতে থাকে সর তোলা। সর পুরু হলে তা পাত্রে তুলে জমিয়ে রাখা হয়। আঁইয়ার ঘরে ঘরে এটাই রোজনামচা।

রাবড়ি তৈরিতে এই গ্রামের খ্যাতি এতটাই যে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার নামীদামি মিষ্টির দোকানে দিনের পর দিন রাবড়ির জোগান দিয়ে চলেছে আঁইয়া। রাবড়ি খেয়ে খদ্দেরের তৃপ্তি আর প্রশংসার নেপথ্যে কিন্তু থাকে আঁইয়ার মানুষের হাতযশ। গ্রামের প্রতিটি পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাবড়ি তৈরিতে মশগুল। এখানে ৫০ থেকে ৬০ ঘর বাসিন্দা রয়েছেন। প্রতিটি বাড়িতেই কমবেশি রাবড়ি তৈরি হয়। গড়ে প্রতিটি বাড়িতে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ লিটার দুধ লাগে।

কড়ায় যে দুধে জাল দেওয়া হয় তার নির্দিষ্ট মাপ আছে। কোনও কিছুই সেই হিসাবের বাইরে নয়। এমনটাই জানালেন রাবড়ির প্রবীণ কারিগর গৌরমোহন বালতির। তিন পুরুষ ধরে এই পেশায়। জানান, গ্রামের আশেপাশে অনেকেরই কৃষিজমি আছে। যাঁদের জমি আছে তাঁদের বেশিরভাগই বাইরের খেতমজুর দিয়ে চাষ করান। নিজেরা মূলত রাবড়ি তৈরিতেই ব্যস্ত থাকেন। আঁইয়া লাগোয়া পাশের লক্ষণপুর গ্রাম থেকে গরুর দুধ আসে।

গৌরবাবুর কথায়, ‘‘সাধারণত একটা কড়ায় ৭ লিটার দুধ ফোটানো হয়। সেই দুধ ফুটিয়ে দেড় থেকে দু’লিটারে নামিয়ে আনা হয়। দুধ ফুটে কমে আসতেই বাড়ির মহিলারা তালপাতার পাখা হাতে জোরে বাতাস দেন দুধের কড়াইয়ে। হাওয়া পেয়েই ঘন দুধে মোটা সর পড়তে শুরু করে। সরু ধারালো কাঠের অংশ দিয়ে সর কেটে কড়ার গায়ে লেপ্টে দেওয়া হয়। কড়ার তাপে তা শুকিয়ে যায়। পরে তা হাঁড়িতে জমিয়ে তৈরি হয় রাবড়ি।’’

লাভ কেমন থাকে জানতে চাওয়ায় নেপাল বালতি, বংশী খামরুরা বলেন, ‘‘এক সময় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কিলো দরে কাজ শুরু করেছিলাম। এখন দাম ঠেকেছে ২০০ টাকায়। মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। উৎসবের মরসুম থাকলে একটু বেশি।’’

তবে দাম যাই হোক না কেন, আঁইয়ার রাবড়ির মৌতাতে মশগুল কলকাতার মিষ্টিরসিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sweet Rabri Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE