Advertisement
E-Paper

বহুতল ভেঙে পড়ল পাশের বাড়িতে

শনিবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটেছে সালকিয়ার ত্রিপুরা রায় লেনে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত দেড়টা থেকে তিনটে পর্যন্ত বিকট শব্দ করে ওই বহুতলটি হেলে পড়তে থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০০:১৬
হুড়মুড়িয়ে: এ ভাবেই ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ বহুতলটির একতলা। রবিবার, সালকিয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হুড়মুড়িয়ে: এ ভাবেই ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ বহুতলটির একতলা। রবিবার, সালকিয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

কয়েক বিঘা পুকুর বুজিয়ে তৈরি হয়েছে একের পর এক বহুতল। তেমনই একটি নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বাড়ির একতলা মাটিতে সম্পূর্ণ বসে গিয়ে ভয়াবহ শব্দে ভেঙে হেলে পড়ল পাশের বাড়ির উপরে।

শনিবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটেছে সালকিয়ার ত্রিপুরা রায় লেনে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত দেড়টা থেকে তিনটে পর্যন্ত বিকট শব্দ করে ওই বহুতলটি হেলে পড়তে থাকে। পিলার সুদ্ধ গোটা একতলা মাটিতে বসে যায়। সেটির চাপে ভেঙে পড়ে পাশের বাড়ির সীমানা পাঁচিল। কেউ হতাহত না হলেও এই ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়ায় ঘন বসতিপূর্ণ ওই এলাকায়। খবর পেয়ে রবিবার সকালেই ঘটনাস্থলে আসেন হাওড়া পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সদস্যেরা।

পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচতলা ওই নির্মীয়মাণ বাড়িতে এখনও পর্যন্ত কেউ থাকেন না। তবে ঘটনার সময়ে তিনতলায় ঘুমোচ্ছিলেন জমির এক মালকিন এবং তাঁর পাঁচ বছরের শিশুপুত্র-সহ মোট ছ’জন। বাড়িটি ধীরে ধীরে হেলে পড়তে থাকায় তাঁরা কোনও রকমে নেমে আসেন। বিকট শব্দ শুনে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন আশপাশের তিন-চারটি বাড়ির বাসিন্দারা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিল্ডিং দফতরের আইনের তোয়াক্কা না করে মাত্র তিন ফুট চওড়া রাস্তার উপরে তৈরি হয়েছে পাঁচতলা বাড়িটি। একতলার পিলারের কয়েক ফুট ছাড়া সবটাই বসে গিয়েছে মাটির নীচে। গোটা বাড়িটি বিপজ্জনক ভাবে হেলে রয়েছে পাশের একটি তিনতলা বাড়ির উপরে। রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা পিলার ও কংক্রিটের চাঙড়।

ওই বাড়ির তিনতলার বাসিন্দা লক্ষ্মীরানি দত্ত বলেন, ‘‘এই জমি আমাদেরই। আগে টালির চালের বাড়ি ছিল। প্রোমোটারেরা এই বাড়ি করছে। কিন্তু সেটি যে এত নিম্ন মানের মালমশলা দিয়ে করবে জানতাম না। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছি।’’ পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দা অলোক বাগ বলেন, ‘‘তীব্র শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। বাইরে বেরিয়ে দেখি, পাঁচতলা বাড়িটি ভেঙে পড়ছে। সেই বাড়ির লোকজনদের নিয়ে পাঁচিল টপকে বেরিয়ে আসি।’’

যে বাড়িটির গায়ে পাঁচতলা বাড়িটি হেলে পড়েছে, সেখানে থাকেন বিএসএনএলের প্রাক্তন কর্মী প্রকাশচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন,‘‘আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকি। স্ত্রী অসুস্থ। বাড়িটি যে ভাবে হেলে পড়েছে, যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। ওই ঘটনার পরে আতঙ্কে দু’চোখ এক করতে পারছি না।’’

পুর আইন না মেনে তিন ফুট চওড়া গলিতে কী ভাবে ওই বহুতল তৈরি হচ্ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়েরা। এক বাসিন্দা সুজিত দাস বলেন, ‘‘আমাদের দোতলা বাড়ির নকশা পুরসভার বিল্ডিং দফতর থেকে অনুমোদন করাতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যাই। সেখানে এই পাঁচতলা বাড়ির নকশা অনুমোদন পায় কী করে?’’

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগে হাওড়ার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৮/৪, ত্রিপুরা রায় লেনে পাঁচতলা এই বাড়িটির নির্মাণ শুরু হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাজ শুরু হওয়ার পরেই জমির এক শরিক আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেন। কিন্তু তার পরেও কাজ বন্ধ হয়নি। এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর তথা হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘কী ভাবে ওই বাড়িটি তৈরি হচ্ছিল, খোঁজ নিচ্ছি। বাড়িটি নিয়ে এখন কী করণীয়, সেই সিদ্ধান্ত নেবে পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলী।’’

হাওড়া পুরসভার কমিশনার তথা প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বাড়িটি সম্পূর্ণ বেআইনি। এখন যা অবস্থা, তাতে সেটি ভেঙে দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাঁরা এই বাড়ি তৈরি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Salkia Building
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy