Advertisement
E-Paper

কাজ হারিয়ে রোজগার শূন্য, সপরিবার স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি

খরচ কুলোতে না-পেরে বিডিওকে চিঠি লিখে সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছেন হাওড়ার ডোমজুড়ের মাকড়দহের এক প্রৌঢ়।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নুরুল আবসার 

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৩
Share
Save

সুস্থ শুধু তাঁর আট বছরের মেয়ে। অশীতিপর বাবা-মা, স্ত্রী, ১৬ বছরের ছেলে এবং তিনি নিজেও অসুস্থ। পরিবারে চিকিৎসা খরচই লাগে মাসে ছ’হাজার টাকা।

তার উপর রয়েছে খাওয়া এবং আনুষঙ্গিক খরচ। করোনা-আবহে কাজ গিয়েছে। খরচ কুলোতে না-পেরে বিডিওকে চিঠি লিখে সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছেন হাওড়ার ডোমজুড়ের মাকড়দহের এক প্রৌঢ়।

ওই চিঠি পেয়ে গত শনিবার বিডিও রাজা ভৌমিক প্রৌঢ়কে নিজের অফিসে ডেকে পাঠিয়ে ধৈর্য ধরার পরামর্শ এবং পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন। বিডিও বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, সত্যি সমস্যা আছে। কী ভাবে ওই পরিবারের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটা দেখছি। তবে যে কথা বলে উনি চিঠি লিখেছেন, সেটা সঠিক পথ নয়। অপরাধও। আমরা সবাই লড়াই করছি। ওঁকেও লড়াই করে বাঁচতে হবে। এটা ওঁকে বুঝিয়েছি।’’

বিডিও-র কাছ গিয়ে অবশ্য কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছেন প্রৌঢ়। তিনি বলেন, ‘‘দুশ্চিন্তায় মাথার ঠিক ছিল না। কিছু সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি। দেখা যাক কী হয়! লড়াই তো করতেই চাই।’’

ওই প্রৌঢ় ভ্রমণ সংস্থার জন্য বাস জোগাড় করতেন। বাস-মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া কমিশনে তাঁর সংসার চলত। করোনা আবহে সেই কাজ বন্ধ হয়ে রোজগার এখন শূন্য। তাঁর ছেলের অটিজ়ম রয়েছে। স্ত্রীর ডায়াবিটিস। প্রৌঢ় নিজে উচ্চ-রক্তচাপের রোগী। মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

মূলত ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়েই নাজেহাল হয়েছেন প্রৌঢ়। তিনি জানান, দেশের নানা জায়গায় গিয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই রোগ সারার নয়। তাঁরা হোমে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। বেসরকারি হোমের খরচ চালানোর সামর্থ্য তাঁর নেই। সরকারি হোমে জায়গা মেলেনি বলে তাঁর দাবি। ফলে, ছেলেকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা চালাচ্ছেন। এ জন্য নানা জনের থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়েছিলেন। পরে বাড়ি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বন্ধক রেখে সেই টাকায় তিনি ধার শোধ করছিলেন। ব্যাঙ্কেরও কিস্তি মেটাচ্ছিলেন। কিন্তু লকডাউন সব এলোমেলো করে দেয়।

প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাঙ্কের কিস্তি দিতে পারছি না। ব্যাঙ্ক থেকে রোজ ফোন আসছে। অনেক টাকা বাকি পড়েছে। এখন ব্যাঙ্ক বলছে, বাড়ি নিলাম করে টাকা উসুল করবে। খেতে পাচ্ছি না, ওষুধ কিনতে পারছি না, তার উপরে নিরাশ্রয় হওয়ার উপক্রম। ভেবেছিলাম বাড়ি বিক্রি করে সমস্যা মেটাব। সেটাও এখন হচ্ছে না। কার মাথা কাজ করে? পরিবারের সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই বিডিওকে ওই চিঠি দিই।’’

বাড়িটির ব্যাপারে ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলারও আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ভাবে ঋণ আদায়ে চাপ দেওয়া ঠিক নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

Euthanasia Coronavirus Lockdown

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy