Advertisement
E-Paper

‘কটূক্তি’র সাজা, গয়না পরিয়ে পথে ঘোরানো হল যুবককে

বুধবারের ওই ঘটনার পরে অভিযুক্ত সন্তোষ প্রসাদকে আটক করেছে লিলুয়া থানার পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৪
সেই যুবককে পরানো হচ্ছে গয়না।

সেই যুবককে পরানো হচ্ছে গয়না।

এক সময়ে অভিযুক্তকে মাথা নেড়া করে ঘোল ঢেলে গাধার পিঠে চড়িয়ে গ্রামে ঘোরানোর নিদান দিতেন সমাজের মাতব্বরেরা। শাস্তি হিসেবে লোকের গালে চুনকালি লেপে দেওয়ার রেওয়াজও প্রচলিত ছিল। এ বার লিলুয়ার হালদারপাড়ায় এক মহিলার সাজ নিয়ে মন্তব্য করার অভিযোগে এক যুবককে মহিলাদের নকল গয়না পরিয়ে পাড়ায় ঘোরানো হল। বাসিন্দাদের যুক্তি, ওই যুবককে ‘মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল’ করে তুলতেই ওই সিদ্ধান্ত।

বুধবারের ওই ঘটনার পরে অভিযুক্ত সন্তোষ প্রসাদকে আটক করেছে লিলুয়া থানার পুলিশ। আদতে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ওই যুবক লিলুয়ায় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনি হালদারপাড়ারই বাসিন্দা। তদন্তকারীরা জানান, বছর তিরিশের ওই যুবক কিছু দিন ধরেই পাড়ার মহিলাদের সাজ-পোশাক নিয়ে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করতেন। এই নিয়ে দু’এক বার স্থানীয়েরা তাঁকে সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু ওই যুবক নিজের আচরণ বদলাননি।

পুলিশ জানায়, এ দিন বেলার দিকে হালদারপাড়ায় এক মহিলাকে তাঁর গয়না নিয়ে নানা বিকৃত মন্তব্য করেন ওই যুবক। অভিযোগ, তিনি ওই মহিলার হাত ধরেও টানেন। তাতে ওই মহিলা চিৎকার করে লোকজন ডাকেন। তিনি নিজেই সন্তোষকে কিল-চড় মারতে থাকেন। এমন দৃশ্য দেখে স্থানীয়দের অনেকেই সেখানে জুটে যান। ওই যুবকের এমন স্বভাব সম্বন্ধে এলাকার লোকজন আগে থেকেই জানতেন। মহিলা যুবককে কিল-চড় মারছেন দেখে স্থানীয়েরা কয়েক জনও ওই যুবককে ঘিরে ধরে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। এর পরে তাঁদের মধ্যে কয়েক জন গিয়ে স্থানীয় একটি নকল গয়নার দোকান থেকে টিকলি, টায়রা ও নাকছাবি কিনে এনে পরিয়ে দেন ওই যুবককে। তাঁকে টানতে টানতে গোটা হালদারপাড়ার অলিগলিতে ঘোরানো হয়। তাঁকে দিয়ে এমন শপথও করানো হয় যে এই ভাবে মহিলাদের আর তিনি বিরক্ত করবেন না। গয়না পরা ওই যুবককে দেখতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন স্থানীয় মহিলারাও। পরে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেন পাড়ার লোকজনই।

দেবাঞ্জন চক্রবর্তী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ছেলেটি পাড়ার মেয়েদের পিছন পিছন গিয়ে কাউকে বলত তাঁকে শাড়িতে মানাচ্ছে না, তিনি যেন সালোয়ার পরেন। কোনও তরুণীকে জিন্‌স পরতে বলত। এমনকি মহিলাদের লক্ষ্য করে কুরুচিকর কথাবার্তাও বলত।’’

কিন্তু প্রথমেই পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে এক জন যুবককে মহিলাদের গয়না পরিয়ে ঘোরানোর সিদ্ধান্ত কেন? এলাকার অন্য এক বাসিন্দা শুভজিৎ দাস বলেন, ‘‘মহিলাদের গয়না পরিয়ে তাঁর পৌরুষে জোরালো ধাক্কা দিতেই এই ব্যবস্থা। যাতে সে মহিলাদের সম্মান করতে পারে।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের এমন সিদ্ধান্তে বিতর্কও তৈরি হয়েছে।

সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র কিংবা মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায়রা মনে করেন বাসিন্দাদের এমন সিদ্ধান্ত দৃষ্টান্তমূলক। ভবিষ্যতে তিনি সতর্ক থাকবেন।

তবে নারী আন্দোলনকর্মী শাশ্বতী ঘোষের দাবি, ‘‘মহিলাদের গয়না পরিয়ে ওই যুবককে হেনস্থার নামে যা করা হল, তা আসলে মহিলাদেরই অপমান। এতে তাঁর মনে মহিলাদের প্রতি বিদ্বেষই তৈরি হবে। ওই যুবকের কাউন্সেলিং প্রয়োজন।’’

Crime Liluah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy