একটি শিশুর শ্লীলতাহানির অভিযোগে ধৃত যুবককে মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের সামনেই পুলিশের হাত থেকে কার্যত ছিনিয়ে নিয়ে বেধড়ক পেটালেন একদল বিক্ষোভকারী। তাঁরা সকলেই বিজেপি সমর্থক বলে দাবি করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়া আদালত চত্বরে। পরে পুলিশ এবং আইনজীবীদের সাহায্যে অভিযুক্তকে কোনওক্রমে আদালতকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কোর্ট লক-আপের সামনে নামানো হয় বিশাল পুলিশবাহিনী ও র্যাফ।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেকের এক ছাত্রীকে তিন দিন ধরে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে জিন্নত মল্লিক নামে এক টোটোচালককে সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করে পুলিশ। জিন্নত ডোমজুড় থানা এলাকার বাসিন্দা। বছর তিরিশের ওই যুবক শিশুদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার কাজ করত। অভিযোগ, বাকিদের নামিয়ে দেওয়ার পরে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ওই শিশুটির উপরে যৌন নির্যাতন চালাত সে। পরিবারের অভিযোগ, গত তিন দিন ধরেই মেয়েটি অনেক দেরি করে স্কুল থেকে ফিরছিল। সোমবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পরে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখনই বাড়ির লোক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে ঘটনাটি জানতে পারেন। এর পরেই তাঁরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই রাতেই অভিযুক্ত টোটোচালককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অভিযুক্তকে প্রথমে কোর্ট লক-আপে নিয়ে আসা হয়। পরে যখন তাকে আদালতে নিয়ে আসা হয়, তখন মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের সামনেই দলীয় ঝান্ডা, প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সমর্থকেরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিজেপি অন্য সমর্থকেরাও। পুলিশের ধারণা, আজ, মঙ্গলবার অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হবে জেনেই বিজেপি কর্মীরা আগেই আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি অভিযুক্তকে গাড়ি থেকে নামাতেই মারধর শুরু করে দেন তাঁরা। মহিলারা পায়ের জুতো খুলে তাকে মারতে থাকেন। সঙ্গে কিল-চড়-ঘুষি। মহিলাদের সঙ্গে যোগ দেন পুরুষ বিক্ষোভকারীরাও। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে হাওড়া আদালত চত্বরে।
বিক্ষোভকারীদের পক্ষে বিজেপি-র হাওড়া জেলার মহিলা মোর্চার সভানেত্রী দুর্গাবতী সিংহ বলেন, ‘‘যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা, সেই রাজ্যে শিশু থেকে বৃদ্ধা, কেউই বাদ যাচ্ছেন না যৌন নিগ্রহ থেকে। প্রায় প্রতিদিনই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাই ডোমজুড়ের শিশুটির ওই অবস্থা যে করেছে, তাকে আমরা নিজেদের হাতে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। সেই কারণেই পুলিশের হাত থেকে ওকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়।’’
এই ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসে আরও পুলিশবাহিনী। আদালতকক্ষ থেকে আইনজীবীরাও বেরিয়ে এসে ঘটনার প্রতিবাদ করেন। ওই অবস্থায় কোনও রকমে অভিযুক্তকে আদালতকক্ষে ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স নামানো হয়। তবে সেখানে কোনও গোলমাল হয়নি। আদালত অভিযুক্তকে ১৪ দিন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy