Advertisement
১০ ডিসেম্বর ২০২৪

নববর্ষের মিষ্টিতে সাজা পানের স্বাদ, তালশাঁসে আমের জেলি

বাঙালির প্রাণের পয়লা বৈশাখে মিষ্টি হাওয়ায় ভেসে আসছে এমনই কত মিষ্টির নাম, স্বাদ। প্রযুক্তি আর গবেষণার উদ্যমে তৈরি নিত্য নতুন হাজার মিষ্টির দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারাও। বছর শুরুর হালখাতায় ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হয় মিষ্টির প্যাকেট।

প্রকাশ পাল
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫২
Share: Save:

আদ্যিকালের রুপোর পানের বাটা খুলতেই বেরিয়ে এল মিষ্টি পাতা পান, চমনবাহার, মৌরি, সোহারা, এলাচ, লবঙ্গ, পান মশলা। বাদ গেল শুধু চুন, খয়ের আর সুপারি। তবে সেই পান সাজা হল না বৈশাখী বৈঠকের জন্য। বরং সব উপকরণ বেটে দুধে ফেলে তৈরি হল রসমালাইয়ের মতো এক বিশেষ মিষ্টি— নাম পানবাহার। পান আর মিষ্টির একত্র সমাহার। বানানো হচ্ছে চুঁচুড়ার এক মিষ্টির দোকানে।

বাঙালির প্রাণের পয়লা বৈশাখে মিষ্টি হাওয়ায় ভেসে আসছে এমনই কত মিষ্টির নাম, স্বাদ। প্রযুক্তি আর গবেষণার উদ্যমে তৈরি নিত্য নতুন হাজার মিষ্টির দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারাও। বছর শুরুর হালখাতায় ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হয় মিষ্টির প্যাকেট। আগে সেই প্যাকেটে থাকত তাতে নিমকি, লাড্ডু, শনপাপড়ি, অমৃতি, দানাদার, লবঙ্গলতিকা। বদলে যাচ্ছে সেই পয়লার প্রথা! হুগলির বিভিন্ন নামী মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থার দাবি এমনটাই।

চন্দননগরের নামী একটি মিষ্টির দোকানের কর্ণধার শৈবাল মোদকের বক্তব্য, ‘‘আগেকার দিনের সাদা বোঁদের লাড্ডু অর্থাৎ ‘মেঠাই’, গজা, লাড্ডু দিয়ে আপ্যায়ন সারা হত। সেই চল আর নেই। যাঁদের পকেটের জোর একটু বেশি, হালখাতায় তাঁরা ফিউশন মিষ্টি দেবেন ক্রেতাদের।’’ এই দোকানের জলভরা সন্দেশের নামডাক রয়েছে। এই সন্দেশের ভিতরে নলেন গুড়ের পরিবর্তে এখন মিলবে আমের জেলি।

অন্তত উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ী মহল এখন ‘ফিউশন’ মিষ্টির দিকেই ঝুঁকছেন বলে জানিয়েছেন গোটা জেলার মিষ্ঠান্ন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, দানাদার, প্যাঁড়া, কড়াপাকের সন্দেশের মতো পুরোনো পছন্দ অবশ্য এখনও রয়েছে। অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যবসায়ীরা এখনও এমন সব মিষ্টিই বরাত দেন।

তবে হালখাতার মিষ্টি মুখে এখন চাহিদা বেক্‌ড রসগোল্লা, চকোলেট সন্দেশের মতো পদের। চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ের কাছে একটি দোকানে নিমকির পরিবর্ত হিসেবে হালখাতার বরাত পেয়েছে পনির পকোড়া। দোকানের মালিক অরূপ কৈরি বলেন, ‘‘গড়পরতা ব্যবসায়ী এ বারেও হালখাতার পুরনো পদ— মোতিচুর, প্যাঁড়া, লবঙ্গলতিকা অর্ডার দিয়েছেন।’’ তবে তিনিই জানিয়েছেন, ‘ফিউশন’ মিষ্টির কদর ক্রমশ বাড়ছে। গত বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, ‘‘বাইরে বেরিয়ে নববর্ষে যাঁরা মিষ্টিমুখ করেন বা বাড়িতে কিনে নিয়ে যান, তাঁরা পুরনো মিষ্টি নিচ্ছেন না। তাঁদের পছন্দ নতুন পদ।’’

অরূপবাবু জানান, তাঁদের কথা মাথায় রেখে ট্রায়ো-রসমালাই, চকোলেট-রসমালাই, পানবাহারের মতো মিষ্টি তৈরি করা হয়েছে। পানবাহারে পানের স্বাদ, চকোলেট-রসমালাইতে থাকছে চকোলেট স্বাদের পান্তুয়া। তিন স্বাদের রসগোল্লার সঙ্গে ক্রিম মাখিয়ে তৈরি হচ্ছে ট্রায়ো-রসমালাই।

রিষড়ার একটি নামী মিষ্টির দোকানে হালখাতার বরাতে জায়গা পেয়েছে বেকড্‌ রসগোল্লা, বড় শাঁখ সন্দেশ, মোহিনী সন্দেশ। দোকানের কর্ণধার অমিতাভ দে জানান, মোহিনী-সন্দেশের ক্ষেত্রে সন্দেশের ভিতরে আমের প্রলেপ থাকছে।

তিনিই জানালেন, বহু ব্যবসায়ীই এ বার হাঁটছেন ভিন্ন পথে— এক প্যাকেট মিষ্টির বদলে এক হাড়ি রাবড়ি ক্রেতার হাতে তুলে দিতে চাইছেন তাঁরা। বিয়ার প্রস্তুতকারক একটি সংস্থা নিমন্ত্রিত গ্রাহকদের হাতে পয়লা বৈশাখে তুলে দেবেন আম, স্ট্রবেরি এবং চকোলেট স্বাদের মোহিনী সন্দেশ। রাজ্যের এক মন্ত্রী নলেন গুড়ের সন্দেশের বরাত দিয়েছেন রিষড়ার ওই দোকানে। সন্দেশের উপরে গোলাপ ফুলের নকশায় নববর্ষের শুভেচ্ছা।

অমিতাভ বলেন, ‘‘যুগ বদলাচ্ছে। এখন পাত পেড়ে লুচি-আলুরদম, সঙ্গে চার-পাঁচ রকমের মিষ্টি বসিয়ে খাওয়ানো হয় না। তবে বহু ব্যবসায়ী ট্র্যাডিশনাল মিষ্টিই নেন। অপেক্ষাকৃত বড় ব্যবসায়ীরা অবশ্য মিষ্টির স্বাদেও ক্রেতাকে চমক দিতে চাইছেন।’’ আর সেই সঙ্গে রয়েছেন অবাঙালি ব্যবসায়ীরা। এ বঙ্গে এসে তাঁরাও পয়লা বৈশাখ পালন করেন। ‘ফিউশন’ মিষ্টির প্রতি ঝোঁক তাঁদেরই বেশি।

অন্য বিষয়গুলি:

Sweets Poila Baisakh 2018 Bengali New Year পয়লা বৈশাখ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy