Advertisement
E-Paper

মেঘ দেখলেই প্রমাদ গোনে আদি মহল্লা

ও টি রোডের দক্ষিণ দিকে মানকুর মোড়ের কাছ থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত বিস্তৃত এই তল্লাটই শহরের আদি মহল্লা। যার পোশাকি নাম— নিউ ডেভেলপমেন্ট (এনডি) ব্লক। অনেকেই বলেন, শহর বাগনানের পত্তন এই এলাকা থেকেই।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৫
বাগনান ১ বিডিও অফিসের সামনের রাস্তা। ছবি: সুব্রত জানা

বাগনান ১ বিডিও অফিসের সামনের রাস্তা। ছবি: সুব্রত জানা

ও টি রোডের দক্ষিণ দিকে মানকুর মোড়ের কাছ থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত বিস্তৃত এই তল্লাটই শহরের আদি মহল্লা। যার পোশাকি নাম— নিউ ডেভেলপমেন্ট (এনডি) ব্লক।

অনেকেই বলেন, শহর বাগনানের পত্তন এই এলাকা থেকেই। অথচ, এলাকাটি যেন পড়ে রয়েছে যেন সেই যুগেই। বাড়িঘর যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিকাশি ও রাস্তার সমস্যা। উন্নতি হয়নি এতটুকুও।

আকাশে মেঘ দেখলেই প্রমাদ গোনেন এনডি ব্লকের বাসিন্দারা। সামান্য বৃষ্টিতে বাড়ির সামনে হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা গৌরশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘জল বেরিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে, বৃষ্টিতে লোকালয় জলমগ্ন হয়। এত দিনেও নিকাশি নিয়ে কোনও সুষ্ঠু পরিকল্পনা গড়ে উঠল না।’’ একই বক্তব্য আর এক বাসিন্দা আহসান কবিরেরও।

নিকাশি সমস্যার জন্য প্রশাসনের একটি মহল অবশ্য দায়ী করেন স্থানীয় বাসিন্দাদেরই। বাগনান রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড এবং মুম্বই রোড খুব কাছে হওয়ায় এখানে বাড়ি বা আবাসন তৈরি হয়েছে একের পর এক। জলাজমি বুজিয়ে অনেকে নিজের সুবিধামতো বাড়িও তৈরি করেছেন। জলাজমি বুজে যাওয়ার ফল যা হয়, তাই হয়েছে। বর্ষায় জল জমে যাচ্ছে।

বাসিন্দাদের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, এখানে বাড়ি তৈরির অনুমতি দেয় গ্রাম পঞ্চায়েত। তারা অনুমতি দেওয়ার আগে জল নিকাশির ব্যবস্থা আছে কিনা তা দেখে নেয় না কেন? এই চাপান-উতোরের মধ্যে অন্য একটি কারণও উঠে এসেছে নিকাশি সমস্যার পিছনে। রেললাইনের উত্তর দিক বরাবর একটি নিকাশি খাল আছে। বছর দশেক আগেও সেখান দিয়ে শহরের উত্তর দিকের জমা জল নিকাশি হয়ে দামোদর ও রূপনারায়ণে পড়ত। কিন্তু দুর্লভপুর লেভেল ক্রসিং তৈরির সময়ে সেই খালের উপর দিয়ে অ্যপ্রোচ রোড তৈরি করে রেল। ফলে, নিকাশি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন খাল কাটা হয়। ব্লক অফিস থেকে লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত যে রাস্তা আছে, তাতে কালভার্ট করে তার মাধ্যমে এই খালটিকে রেলের খালের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নতুন খাল বা কালভার্ট এতটাই সংকীর্ণ যে তাতে জল নিকাশি সম্ভব হয় না। তাঁরা দাবি করেন, দুর্লভপুর লেভেল ক্রসিংয়ের অ্যাপ্রোচ রোডে রেলকে একটি কালভার্ট করে দিতে হবে। তবেই নিকাশি সমস্যা দূর হবে।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া খড়্গপুর বিভাগের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য জানান, এই ধরনের সমস্যার কথা তাঁদের কেউ বলেননি। যদিও বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ (রাজা) সেন দাবি করেছেন, ‘‘আমি রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছি যাতে তাঁরা দুর্লভপুর লেভেল ক্রসিংয়ের রাস্তার কালভার্ট করে দেন।’’ একই সঙ্গে বিধায়ক জানান, শুধু রেলের খাল নয়, এলাকার জল মুম্বই রোডের পাশে যে খাল আছে তা দিয়ে বেরিয়েও রূপনারায়ণ এবং দামোদরে পড়ে। কিন্তু রাস্তাটিকে ছয় লেন করতে গিয়ে সেই খালও বুজিয়ে দিয়েছে জাতীয় সড়ক সংস্থা। তাঁর দাবি, ‘‘একদিকে রেল এবং অন্য দিকে জাতীয় সড়ক সংস্থা দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়ে বর্ষাকালে ডুবছে বাগনান। আমি জাতীয় সড়ক সংস্থার সঙ্গেও কথা বলেছি। শীঘ্রই তারা খালের মুখ পরিষ্কার করে দেবে বলে জানিয়েছে।’’

বর্ষায় এই নিকাশি সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে বেহাল রাস্তার জন্য। এনডি ব্লকে দু’টি প্রধান রাস্তার একটি আদিবাসী পাড়ার কাছ থেকে বেরিয়ে চলে এসেছে টেঁপুর গ্রাম পর্যন্ত। অন্যটি ওটি রোড থেকে বেরিয়ে যোগ হয়েছে দুর্লভপুর লেভেল ক্রসিংয়ে। এ ছাড়া বাগনান স্টেশন রোড থেকে শুরু হয়ে ব্লক অফিস পর্যন্ত আরও একটি রাস্তাও আছে। হাল খারাপ তিনটিরই। আদিবাসী পাড়া সংলগ্ন রাস্তাটি কিছুটা অংশ ঢালাই করা হলেও বেশিরভাগ অংশে ইট পাতা। অনেক জায়গায় ইট উঠে গিয়েছে। বর্ষায় জল জমে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ব্লক অফিসের সামনের রাস্তাটি পিচ ঢালা। কিন্তু অনেক জায়গায় পিচ উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এনডি ব্লকের ভিতরে স্টেশন রোড থেকে ব্লক অফিস পর্যন্ত রাস্তাটিও পিচ ঢালা। কিন্তু পিচ উঠে গিয়েছে অনেক আগেই। বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নয়ন হালদার বলেন, ‘‘তিনটি রাস্তাই জেলা পরিষদের অধীনে রয়েছে। আমরা উন্নয়নের বৈঠকে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। জেলা পরিষদ তা অনুমোদন করেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’

দিন গুনছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

(চলবে)

nurul absar amar sohor bagnan water logging monsoon rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy