Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভ্রমণ সংস্থার বিরুদ্ধে জয় বহ্নিশিখার

শ্রীরামপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক বহ্নিশিখাদেবী বলেন, ‘‘স্পেন এবং পর্তুগালে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ২০১২ সালের মার্চ মাসে একটি ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়।

জয়ী: বহ্নিশিখা ঘটক। নিজস্ব চিত্র

জয়ী: বহ্নিশিখা ঘটক। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

ইচ্ছে ছিল বিদেশ ভ্রমণের। পরিবর্তে প্রতারণার শিকার হলেও হাল ছাড়েননি হুগলির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা বহ্নিশিখা ঘটক। মামলা করেন ভ্রমণ সংস্থার বিরুদ্ধে। প্রথমে কলকাতায় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। সেখানে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিলে তার বিরুদ্ধে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যায় ভ্রমণ সংস্থাটি। সেখানেও ক্ষতিপূরণের রায় দিলে তার বিরুদ্ধে দিল্লিতে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদা‌লতের দ্বারস্থ হয় ওই ভ্রমণ সংস্থা। কিন্তু সেখানেও তাদের বিরুদ্ধে রায় দেয় আদালত। কলকাতা থেকে রাজ্য তারপর দিল্লি, তিন জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়রানি হলেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ জিতে স্পষ্টতই খুশি বহ্নিশিখাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ছ’বছর লড়াই চলেছে। ঠিক করেছিলাম হাল ছাড়ব না। নিজের মামলা নিজেই লড়েছি। মানুষকে বোকা বানানো যে ঠিক নয়, বিচারে তারই প্রতিফলন ঘটল।’’

শ্রীরামপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক বহ্নিশিখাদেবী বলেন, ‘‘স্পেন এবং পর্তুগালে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ২০১২ সালের মার্চ মাসে একটি ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে তাঁর চুক্তি হয়। ১২ দিন ১১ রাতের সফরের যাবতীয় খরচ ধরে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা অগ্রিম দিই। ভিসা করানোর জন্য ওরা প্রয়োজনীয় নথিপত্র ভ্রমণের কিছু দিন আগে নিয়ে যায়।’’ সমস্যা শুরু হয় তারপর থেকে। তিনি জানান, যাত্রা শুরুর ৪ দিন আগে সংস্থার কার্যালয়ে গেলে তাঁকে বলা হয়, ভিসা আসেনি। এলে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি। ১৭ মে ভোরে তাঁর বিমান ছিল। ১৬ মে সকালে ভ্রমণ সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হয়, বিমানবন্দরে ভিসা পৌঁছে দেওয়া হবে। পরে সন্ধে নাগাদ তাঁকে জানানো হয় ভিসা আসেনি। তাঁর যাওয়া হবে না।’’ বহ্নিশিখাদেবীর কথায়, ‘‘ট্যুর বাতিলের কথা শুনে হতাশ হয়ে পড়ি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি শুধু আমি নই, আরও কয়েক জনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।’’ এরপরেই টাকা ফেরতের দাবিতে সংস্থার কার্যালয়ে চিঠি এবং ই’মেল পাঠান বহ্নিশিখাদেবী। অভিযোগ, সংস্থাটি তাতে কান দেয়নি। শেষে কলকাতা-১ ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করেন বহ্নিশিখাদেবী। আদালতে ভ্রমণ সংস্থাটি দাবি করে, নিজের গাফিলতিতেই বহ্নিশিখাদেবীর সফর বাতিল হয়। তা ছাড়া, চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী তারা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য নয়।

আদালত ভ্রমণ সংস্থাটির যুক্তি মানেনি। ২০১৩ সালের অগস্ট মাসে আদালত রায় দেয়, বহ্নিশিখাদেবীর জমা দেওয়া পুরো টাকা ভ্রমণ সংস্থাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেইসঙ্গে তাঁর মানসিক যন্ত্রণা এবং হয়রানির জন‌্য আরও ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ এবং মামলা চালানোর খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। রায়ের বিরুদ্ধে ভ্রমণ সংস্থাটি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যায়। সেখানে আগের রায় বহাল থাকলেও ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দিল্লিতে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদা‌লতে যায় ওই ভ্রমণ সংস্থা। দু’তরফের বক্তব্য শুনে গত ৩১ অক্টোবর আদালত রায় দেয়, বহ্নিশিখাদেবীর জমা অঙ্ক থেকে ৬ হাজার ২৭৫ টাকা ফেরত দিতে হবে না, যেহেতু ওই টাকা ভিসার জন্য দূতাবাসে জমা দিতে হয়েছে। বাকি দেড় লক্ষ টাকা তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে ক্ষতিপূরণ বা মামলা চালানোর খরচ মকুব করে দেওয়া হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর ওই ভ্রমণ সংস্থা বহ্নিশিখাদেবীকে টাকা ফেরত দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Banhisikha Ghatak Consumer forum tourism agency
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE