Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ভোট না প্রহসন, নালিশ বিরোধীদের

দিনভর তপ্ত আরামবাগ

সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আরামবাগের হিয়াৎপুরে প্রথম বোমা-গুলির লড়াই শুরু হয় দুই গোষ্ঠীর। এখানে নির্দল প্রার্থীর সমর্থকদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। শাসকদল অভিযোগ মানেনি।

সশস্ত্র: বুথ দখল করে ব্যালট বাক্স নিয়ে পালানোর সময় গুলি চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সোমবার আরামবাগের আরান্ডির রাগপুরে। ছবি: মোহন দাস

সশস্ত্র: বুথ দখল করে ব্যালট বাক্স নিয়ে পালানোর সময় গুলি চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সোমবার আরামবাগের আরান্ডির রাগপুরে। ছবি: মোহন দাস

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০৩:২৮
Share: Save:

মনোনয়ন-উত্তর পর্বে হুগলিতে শাসকদলের প্রধান চিন্তা ছিল দলের গোঁজপ্রার্থীদের নিয়ে। সোমবার ভোটের দিন জেলার অন্যত্র সেই সমস্যা বিশেষ মাথাচাড়া না-দিলেও ব্যতিক্রম আরামবাগ। এখানে দু’পক্ষের বোমা-গুলির লড়াই, মারামারি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই— কিছুই বাদ গেল না। জখম হন অন্তত ছ’জন।

সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আরামবাগের হিয়াৎপুরে প্রথম বোমা-গুলির লড়াই শুরু হয় দুই গোষ্ঠীর। এখানে নির্দল প্রার্থীর সমর্থকদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। শাসকদল অভিযোগ মানেনি। ভোটাররা পালাতে থাকেন। সেই সময় শেখ আজিম নামে এক ভোটার জখম হন। তাঁর দাবি, ‘‘কনুই ছুঁয়ে গুলি গিয়েছে।’’

ওই গোলমালের পরে ভোট বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ বাহিনী এলে ভোট শুরু হয়। কিন্তু দুপুরে ফের দু’পক্ষের বোমা-গুলির লড়াই শুরু হয় পুলিশের সামনেই। তাতে কেউ হতাহত হননি। পুলিশ লাঠি চালিয়ে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে। এরপর বুথে আর ভোট হয়নি।

শুধু হিয়াৎপুরেই নয়, আরান্ডি-২ পঞ্চায়েত এলাকার রাগপুর, সিয়ারা, পুরা, তিরোল পঞ্চায়েতের পারআদ্রা, মলয়পুর সালেপুর, পুরশুড়ার ডিহিবাতপুর, দেউলপাড়া, চিলাডাঙি, ভাঙামোড়া, খানাকুল-২ নম্বর ব্লকের রাউতখানার মতো যতগুলি বুথে তৃণমূলের গোঁজপ্রার্থী ছিলেন, সর্বত্রই কম-বেশি গোলমাল হয়েছে। সিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালাতে আসে বলে অভিযোগ। নির্দল সমর্থকেরা তাঁদের পাল্টা মারধর করে বলে অভিযোগ। দু’টি মোটরবাইকে ভাঙচুর চালানো হয। বিকেলে গুলি-বোমার লড়াই শুরু রাগপুরে। অভিযোগ, তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা বুথ দখলের চেষ্টা করে। নির্দল সমর্থকেরা তাদের রাস্তায় ফেলে পেটায় বলে অভিযোগ। চার জন গুরুতর আহত হয়। পুলিশ গিয়ে লাঠি চালিয়ে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে। এই গোলমালের মধ্যে দু’টি ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়ে গেলেও পুলিশ পরে তা উদ্ধার করে।

পারআদ্রা প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথ চত্বরে তৃণমূল প্রার্থী সুজাহান বেগম এবং নির্দল প্রার্থী জাহেদা বেগম হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার জেরে দু’জনের অনুগামীরা মারপিটে জড়ান। ঘণ্টাদেড়েক ভোট বন্ধ থাকে। পুরশুড়ার চিলাডাঙি উত্তরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০৫ নম্বর বুথেও দু’পক্ষের ঝামেলা হয়। এখানে মহিলারা ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। প্রিসাইডিং অফিসার অনুপকুমার মণ্ডল বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে ভোট হচ্ছিল। ১০টা থেকে অশান্তি শুরু হয়। সওয়া ১১টা নাগাদ মহিলাদের একটা বড় দল এসে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে। বুথে নিরাপত্তার ব্যবস্থা বলতে এক বন্দুকধারী পুলিশ এবং লাঠি হাতে এক সিভিক ভলান্টিয়ার। ওঁরা আর কী করবেন?”

এই গোষ্ঠী-কাজিয়া নিয়ে তৃণমূল জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “নির্দলদের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই। ওরাই বোমা-বন্দুক নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। পুলিশ বিষয়টা দেখছে।”

তবে, মহকুমায় বিরোধীদের উপরে হামলার অভিযোগ যে একেবারে নেই, এমন নয়। গোঘাটের শ্যাওড়া হাইস্কুলে নিজের বুথে ভোট দিতে যাওয়ার পথে বাইক-বাহিনীর তাড়া খেয়ে বাড়ি ফিরতে হয় ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন বিধায়ক তথা এ বারের প্রার্থী বিশ্বনাথ কারক, তাঁর স্ত্রী মিঠুমায়া কারক-সহ কয়েক জনকে। বিশ্বনাথবাবুর অভিযোগ, “তৃণমূলের কয়েকশো ছেলে বাইকে মুখে গামছা বেঁধে, হাতে লাঠি নিয়ে পুরো এলাকা চক্কর মারছে। আমার গাড়ি দেখে তাড়া করলে ফিরে আসতে হয়। আমাদের ভোটারদেও বুথে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পর্যবেক্ষকদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।” অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। আরান্ডির দক্ষিণ নারায়ণপুরে রাস্তায় ঘিরে সিপিএমের জেলা পরিষদ প্রার্থী উত্তম সামন্তকে তৃণমূলের ছেলেরা মারধর করে বলে অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE