বিধানসভা ভোটের মুখে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তাদের ঘরে ফের হানা দিল সিবিআই। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গোল্ড মাইন অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি লগ্নি সংস্থার তিন কর্তার বাড়িতে তল্লাশি করলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। একই সঙ্গে চুঁচুড়া, চন্দননগর এবং পান্ডুয়ায় তল্লাশি চালানো হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় নথিপত্র। তিন জায়গাতেই প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা তল্লাশি চলে।
সারদা কান্ড নিয়ে এমনিতেই অস্বস্তিতে শাসক দল। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নারদ কান্ড। তার পর এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের অপদার্থতাতেই লগ্নি সংস্থাগুলি যে রমরম করে চলছিল, সেই অভিযোগ ফের সামনে আনছে বিরোধীরা।
সিবিআই সূত্রের খবর, বেশ কয়েক বছর ধরেই ওই সংস্থাটি চলছিল। সাধারণ মানুষের টাকা জমা নিয়ে তা বেশি সুদে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত। অভিযোগ, মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেলেও বহু আমানতকারী টাকা ফেরত পাননি। অর্থলগ্নির ব্যবসা ছাড়াও সংস্থার ফাস্টফুড তৈরির ব্যবসা রয়েছে। তার জন্য পোলবায় পশু খামার তৈরি করা হয়। সেখানে এমু পাখির চাষ করা হত। এমু পাখির চর্বি থেকে ব্যথার ওষুধ তৈরির কারবারও ছিল। লগ্নিকারীদের টাকা ওই সব ব্যবসায় খাটানো হত বলে অভিযোগ।
সারদা কান্ড সামনে আসার পর থেকেই অবশ্য সংস্থার ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। অভিযোগ, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। বহু আমানতকারী চুঁচুড়ার পিপুলপাতিতে সংস্থার অফিসে ভিড় জমাতে শুরু করেন। কিন্তু তাঁদের খালি হাতেই ফিরতে হয়। পশু খামারটির হালও খারাপ হয়ে পড়ায় কিছু দিন আগে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সারদা কেলেঙ্কারির পর অন্য অনেক অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে এই সংস্থাও ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। সেবির কাছে অভিযোগ আসছিল, আমানতকারীদের টাকা সংস্থাটি ফেরত দিচ্ছে না। সিবিআইয়ের তরফে গোপনে সংস্থার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত এ দিন সংস্থার অন্যতম কর্ণধার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই।
সিবিআই সূত্রে খবর, প্রতি দলে ৫ জন করে তিনটি দল চুঁচুড়া, চন্দননগর এবং পান্ডুয়ায় তল্লাশি চালানো হয়। একটি দল ভোরে চন্দননগরের বাগবাজারে জয়দীপবাবুর ফ্ল্যাট চিহ্নিত করে চন্দননগর থানায় যান। তারপর পুলিশকে নিয়ে তল্লাশি চলে। সেখানে একতলায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন জয়দীপ। দোতলার ফ্ল্যাটে শাশুড়ি এবং অন্যরা থাকেন। তবে সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তল্লাশির সময় জয়দীপ বাড়িতে ছিলেন না।
স্ত্রী কল্যাণীদেবী তদন্তকারীদের জানান, স্বামী প্রার্তভ্রমণে বেরিয়েছেন। যদিও পরে আর বাড়িতেই ফেরেননি জয়দীপ। সিবিআইয়ের অনুমান, হানার কথা কোনও ভাবে পৌঁছে যাওয়াতেই জয়দীপ পালিয়ে যান। দুপুর ৩টে পর্যন্ত তল্লাশি চালান।
পান্ডুয়ার সরাইতে জয়দীপের পুরনো বাড়িতেও হানা দেয় তদন্তকারীদের একটি দল। অপর দলটি যায় চুঁচুড়ার ধরমপুরে সংস্থার ম্যানেজার তুষার শূরের বাড়িতে। তবে তাঁকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি।