Advertisement
E-Paper

দ্বিশতবর্ষের স্মরণ উৎসব বছর জুড়ে

সম্প্রতি দ্বিশতবর্ষ উদযাপন নিয়ে নাগরিক অধিবেশন গৃহীত নানা প্রস্তাব নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পুরপ্রধান।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৬
উজ্জ্বল: উইলিয়াম কেরির মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। নিজস্ব চিত্র

উজ্জ্বল: উইলিয়াম কেরির মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। নিজস্ব চিত্র

ইতিহাসের আঙিনা ধরে বিরল এক সরণিতে এসে দাঁড়াল শ্রীরামপুর কলেজ।

এই প্রতিষ্ঠান‌ এশিয়ার প্রথম মিশনারি ক‌লেজ। প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ও বটে। ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যশালী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বিশতবর্ষ উদ্‌যাপন শুরু হয়ে গেল সোমবার থেকে । আগামী এক বছর ধরে নানা অনুষ্ঠান চলবে গঙ্গাপাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে।

সোমবার বিকেলে কলেজ প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন কলেজ কাউন্সিলের মাস্টার জন এস সদানন্দ, অধ্যক্ষ ভ্যানস্যাংগল্যুরা, শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়। কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী, পড়ুয়ারাও হাজির ছিলেন অনুষ্ঠানে। ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পে পুরসভার তরফে কলেজের সামনের রাস্তা এবং গঙ্গার ধার বরাবর সৌন্দর্যায়নের আশ্বাস দেন পুরপ্রধান।

সম্প্রতি দ্বিশতবর্ষ উদযাপন নিয়ে নাগরিক অধিবেশন গৃহীত নানা প্রস্তাব নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পুরপ্রধান। এই প্রসঙ্গে পুরপ্রধান অমিয়বাবু বলেন, ‘‘শহরের প্রভাসনগরে প্রস্তাবিত সিল্ক হাবের জমি লাগোয়া সরকারি খাস জমিতে কলেজ ক্যাম্পাস বাড়ানো যেতে পারে।’’ ধর্মতত্ত্বের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও এই কলেজ যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়, সে ব্যাপারেও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন তিনি। কলেজের প্রথম ভবন ‘অল্ডিন হাউজ’ সংস্কারের আবেদনও জানান।

পার্থবাবু বলেন, ‘‘এ তো আধা কলেজ, আধা বিশ্ববিদ্যালয়। এটা অনেক বড় ব্যাপার। আপনাদের আবেদন নিশ্চয়ই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে দেব।’’ শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘‘এই কলেজ রাজ্যের অন্যতম প্রধান একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে উৎকর্ষের সঙ্গে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’’

ইতিহাসের পাতা উল্টে জানা যায়, আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে উপনিবেশের জন্য শ্রীরামপুরকে বেছে নিয়েছিল দিনেমাররা। এই শহর তখন বাণিজ্য নগরী হয়ে ওঠে। স্থাপত্য, শিল্প, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে থাকে। শহরের নাম তখন ছিল ‘ফ্রেডরিক নগর’। তবে শিক্ষার প্রসার তখনও সে ভাবে হয়নি। এমন সময়েই ১৮০০ সালে শ্রীরামপুরে আসেন উইলিয়াম কেরি, জ্যোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড। পরের কয়েক দশকের কর্মকাণ্ড তাঁদের ‘শ্রীরামপুর-ত্রয়ী’ হিসেবে পরিচিত করে তোলে।

এই তিন জনের হাত ধরেই গঙ্গার ধারে ‘অল্ডিন হাউজে’ সূচনা হয় শ্রীরামপুর কলেজের। সাল তখন ১৮১৮। পড়ুয়ার সংখ্যা সাকুল্যে ৩৭ জন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব পড়ুয়ার জন্য কলেজের দরজা খোলা ছিল। সেই সময়ের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন কেরি লাইব্রেরি ও রিসার্চ সেন্টারের প্রাক্তন কিউরেটর তথা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ডেনমার্ক সরকারের দেওয়া প্রায় ১০ একর জমিতে নিজস্ব ভবন‌ তৈরির পরে ১৮২২ সালে কলেজ বর্তমান জায়গায় উঠে আসে।

শ্রীরামপুর মিশনের গ্রন্থাগার এই ভবনে কলেজের গ্রন্থাগারে রূপান্তরিত হয়। কলেজের সিঁড়ি এবং ঢালাই করা লোহার মূল গেট দিনেমারদের রাজার উপহার। কলেজের মুকুটে আরও এক পালক যোগ হয় ১৮২৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, যে দিন ডেনমার্কের রাজা ষষ্ঠ ফ্রেডরিকের দেওয়া সনদবলে এই প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়।

কেরি ছিলেন কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। ১৮৩৩ সালে কলেজের সংবিধান চালু হয়। কলেজ কাউন্সিলের প্রথম মাস্টার হন কেরি। তখন অধ্যক্ষ পদে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন‌ জ্যোশুয়া মার্শম্যান।

দ্বিশতবর্ষের প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানে এই ত্রয়ীকে স্মরণ করল শহর শ্রীরামপুর।

Bi-centenary Serampore college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy