গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির কেন্দ্রীয় প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকার হিসাব নেই ডানকুনি পুরসভায়। বুধবার ডানকুনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পুরপ্রধান হাসিনা শবনম। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
২০১০ সালে এই পুরসভায় বিএসইউপি-র (বেসিক সার্ভিসেস ফর আরবান পুওর) সংশ্লিষ্ট প্রকল্প চালু হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৫৪ হাজার টাকা উপভোক্তার দেওয়ার কথা। বাকি টাকা দেয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট পুরসভা। প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দা ওই প্রকল্পের জন্য ৫৪ হাজার টাকা করে জমা দেন। আগামী ৩১ মার্চ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। অভিযোগ, উপভোক্তাদের জমা দেওয়া প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি গরমিলের বিষয়টি জানাজানি হয় পুরসভার অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাছে। হিসেব করে দেখা যায়, ওই প্রকল্পে উপভোক্তাদের দেওয়া যত টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়ার কথা ছিল, আদতে তার চেয়ে অন্তত ৮৫ লক্ষ টাকা কম জমা পড়েছে। ওই টাকার হদিস মেলেনি। পুরসভার হিসাবরক্ষক পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান, পুরসভার আধিকারিক এবং স্থানীয় বিধায়ককে বিষয়টি জানান।
পুরসভা সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পে ব্যাঙ্কে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা রয়েছে। যদিও জমার পরিমাণ ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি হওয়ার কথা। সম্প্রতি ১০ জন তৃণমূল কাউন্সিলর পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে বিষয়টির বিহিত করার দাবি জানান। কাউন্সিলরদের চিঠি পেয়ে নড়েচড়ে বসেন পুরপ্রধান। গত ৪ ফেব্রুয়ারি পুরপ্রধান হাসিনা শবনম পুরসভার কোষাধ্যক্ষ অরিন্দম চক্রবর্তীকে শো’কজ করেন। তার জন্য তাঁকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়। সেই সময়সীমা ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেলেও অরিন্দমবাবু উত্তর দেননি।
বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সাংসদের নির্দেশে তাঁর আপ্ত সহায়ক সুবীর মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার পুরপ্রধান এবং দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এর পরেই বুধবার সন্ধ্যায় পুরপ্রধান ডানকুনি থানায় কোষাধ্যক্ষ অরিন্দম চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে পুরপ্রধান জানিয়েছেন, হিসাবরক্ষক সুনীল মণ্ডলের কাছে প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে কম জমা পড়ার বিষয়টি জানার পরে কোষাধ্যক্ষ অরিন্দম চক্রবর্তীকে শো’কজ করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি উত্তর দেননি। উল্টে ২১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন। এমনকী ওই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুরসভার ফিনান্স অফিসারের কাছে জমা দিতে বলা সত্ত্বেও তা করেননি। অভিযোগের বিষয়ে অরিন্দমবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।
উপ-পুরপ্রধান দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত করলেই সব বোঝা যাবে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’ বিধায়ক স্বাতী খোন্দকার বলেন, ‘‘পুরপ্রধান এফআইআর করেছেন। তদন্তে সত্যি ঘটনা সামনে আসুক। তারপর দলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
তবে ওই পুরকর্মী একা এই গরমিলের পিছনে আছেন, নাকি নেপথ্যে আরও বড় মাথা রয়েছে, তার তদন্ত দাবি করেছেন পুরকর্মীদের একাংশ। বছর দু’য়েক ধরে নানা ব্যাপারে ডানকুনি পুরসভায় ডামাডোল চলছে। কয়েক মাস আগে কর্মী নিয়োগ নিয়ে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। নিয়োগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বার গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকা গরমিলের অভিযোগ নিয়ে ফের উত্তাল হল পুরসভা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy