Advertisement
E-Paper

ধসে পড়ছে চন্দননগরের পাতালবাড়ি

উত্তর ২৪ পরগনার দিক থেকে গঙ্গায় বেআইনি ভাবে বালি তোলার ফলে ওই বিপর্যয়। ভাঙন রোধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়েছিল বালি তোলা

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০৭:৫০
 চলছে গঙ্গা থেকে বেআইনিভাবে বালি তোলা

চলছে গঙ্গা থেকে বেআইনিভাবে বালি তোলা

পাঁচ বছর বাদে চন্দননগরে ফিরে এল গঙ্গা-ভাঙনের আতঙ্ক। বিপন্ন ‘পাতালবাড়ি’ও।

২০১৩ সালের জুন মাসে গঙ্গা ভাঙনের জেরে শহরের হাটখোলা-নোনাটোলা এলাকার দু’টি আবাসন এবং কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পুর কর্তৃপক্ষ এবং সেচ দফতর তদন্তে নেমে দেখেছিল, উত্তর ২৪ পরগনার দিক থেকে গঙ্গায় বেআইনি ভাবে বালি তোলার ফলে ওই বিপর্যয়। ভাঙন রোধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়েছিল বালি তোলা। স্বস্তি পেয়েছিলেন শহরের গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা।

কিন্তু কয়েক মাস ধরে ফের বালি তোলা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। ফের পাড় ভাঙছে গঙ্গা। আগেরবারের ক্ষতিগ্রস্ত আবাসনগুলিতে ফের ফাটল ধরেছে। এমনকী, স্ট্র্যান্ডের ধারে শহরের ঐতিহ্যবাহী ‘পাতালবাড়ি’ও (ভবনটির একটি তল গঙ্গা বরাবর) পড়েছে সেই ভাঙনের কবলে। বিদ্যাসাগর-রবীন্দ্রনাথের ‘স্মৃতিধন্য’ (পুরসভার ফলক সে কথাই বলছে) ওই বাড়ির একাংশ ইতিমধ্যে গঙ্গাগর্ভে চলে গিয়েছে। বাড়ির সীমানা প্রাচীরের কিছুটা অংশও ভেঙে পড়েছে। এমনকী, ভাঙনের জেরে সংলগ্ন ভাষা শহিদ মিনারেও ফাটল ধরেছে।

ভেঙে পড়েছে পাতালবাড়ির একাংশ। নিজস্ব চিত্র

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলির দিকে গঙ্গার নাব্যতা কম। ফলে, উল্টো দিক (উত্তর ২৪ পরগনা) থেকে ক্রমাগত বালি তোলা হলে জোয়ার বা বানের ধাক্কা এ পাড়েই বেশি এসে লাগে। যার জেরে পাড় ভাঙে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গঙ্গা থেকে বালি তোলা যতদিন বন্ধ ছিল, ততদিন কোনও ফাটল বা ভাঙন চোখে পড়েনি। গত কয়েক মাস ধরে ও পাড়ে বালি তোলা চলতে থাকায় ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। কারও যাতে চোখে না-পড়ে সেই কারণে রাতের অন্ধকারে দু’টি নৌকায় যন্ত্র বসিয়ে দেদার বালি তোলা হচ্ছে। সেই যন্ত্রের শব্দের কম্পন এ পাড়েও টের পাওয়া যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত একটি আবাসনের বাসিন্দা লক্ষ্মীনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে এখানে ফ্ল্যাট কিনেছি। পাঁচ বছর আগে আবাসনে ফাটলের জেরে কিছুদিন অন্যত্র থাকতে হয়েছে। আবার তো একই অবস্থা! এ বারও কি আমাদের ঘরছাড়া হতে হবে? প্রশাসন কি কিছু করবে না?’’ পাশের আবাসনটির বাসিন্দা নলিনীরঞ্জন পাহান বলেন, ‘‘আমাদের আবাসনটি গঙ্গা থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে তৈরি হয়েছিল। ভাঙনের জেরে সেই দূরত্ব ২০-২৫ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। আগেরবার ভাঙনে আবাসনের নীচের দিকটা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু আবার ভয় লাগছে।’’

এ শহরেরই বাসিন্দা, পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও গঙ্গা ভাঙন নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘‘পাতালবাড়ি আমাদের শহরের ঐতিহ্য। ও পাড় থেকে বালি তোলা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে রিং-বাঁধ দিয়ে ভাঙন রোধ করা হোক।’’

কী বলছে প্রশাসন?

ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী দাবি করেছেন, ‘‘গঙ্গা থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগ অনেক পুরনো। আমি নিজে গিয়ে দেখেছি, ওখানে বালি তোলা বন্ধ রয়েছে। পুলিশ নজর রাখছে। সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কড়া পদক্ষেপ করার জন্য।’’

কিন্তু চন্দননগর পুরসভা এবং মহকুমা সেচ দফতরও মানছে, গঙ্গা থেকে বালি তোলা শুরু হওয়ার জন্যই ফের ভাঙন। মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভার পক্ষ থেকে আপাতত বালির বস্তা ফেলে প্রাথমিক ভাবে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাকাপাকি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। ও পারের ভাটপাড়া পুরসভাকেও বালি তোলা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।’’ মহকুমা সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Chandannagar Patal Bari Heritage Ganges River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy