Advertisement
E-Paper

ছাত্রীর কাশি, ‘যক্ষ্মা’ দেগে স্কুলে আসতে নিষেধ

তিনিও বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষিকা গর্হিত কাজ করেছেন। আমাকে কিছুই জানাননি। মেয়েটি যাতে নিয়মিত ক্লাস করতে পারে, তা দেখা হচ্ছে।’’ মেয়েটির বাবার আক্ষেপ, ‘‘স্কুল তো শিক্ষার জায়গা। সেখানেই এমন আচরণ!’’

প্রকাশ পাল এবং দীপঙ্কর দে

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৪

পরীক্ষার কোনও বালাই নেই। ছাত্রীকে শুধু কাশতে দেখেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার নিদান— ‘এটা যক্ষ্মা’। তাই স্কুলে ঢুকতেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা!

কলকাতার কাছেই হুগলির চণ্ডীতলার বরিজহাটি গার্লস হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীটি স্কুলে ঢুকতে পারছে না ২৭ জানুয়ারি থেকে। তবে, তাঁর প্রতি প্রধান শিক্ষিকার এমন আচরণের কথা জানাজানি হয়েছে বুধবার। এ দিন স্কুলের এক সহপাঠীর সঙ্গে বিডিও-র কাছে গিয়ে সে সব কথা জানায়। বিডিও-র হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়েটির ভর্তির টাকা জমা নেন। কিন্তু মেয়েটির অভিযোগ, ‘‘ভর্তির টাকা নিলেও সহপাঠীদের সামনে বড়দি বলেন, আমি ছোঁয়াচে রোগ লুকোচ্ছি। প্রমাণ না আনলে ক্লাস করতে দেওয়া হবে না। এমন করলে তো আমার পড়া বন্ধ হয়ে যাবে! ডাক্তারবাবু বলেছেন আমি সুস্থ। তবু ওঁরা বিশ্বাস করতে চাইছেন না।’’

ঘটনা নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা রিনা রায় বিশেষ মন্তব্য করতে চাননি। শুধু অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। কিন্তু কেন মেয়েটিকে ক্লাস করতে দেওয়া হচ্ছে না, এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন। রক্ত বা কফ পরীক্ষা ছাড়াই যে ভাবে ‘যক্ষ্মা হয়েছে’ বলে মেয়েটিকে ক্লাস করতে দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে।

চণ্ডীতলা-২ ব্লকের বিডিও অভ্রজ্যোতি পাল বলেন, ‘‘স্কুলের ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কীসের ভিত্তিতে মেয়েটিকে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হবে না? স্কুল উদ্যোগী হয়ে মেয়েটির পরীক্ষা করাল না কেন? গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’ ওই স্কুলের সভাপতি অসুস্থ হওয়ায় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন চণ্ডীতলা চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক চৈতালি কর্মকার। তিনিও বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষিকা গর্হিত কাজ করেছেন। আমাকে কিছুই জানাননি। মেয়েটি যাতে নিয়মিত ক্লাস করতে পারে, তা দেখা হচ্ছে।’’ মেয়েটির বাবার আক্ষেপ, ‘‘স্কুল তো শিক্ষার জায়গা। সেখানেই এমন আচরণ!’’

মাসখানেক আগে মেয়েটির জ্বর-কাশি হয়। জ্বর সেরে গেলে ২১ জানুয়ারি সে স্কুলে যায়। তবে কাশি ছিল। মেয়েটির অভিযোগ, ক্লাস-টিচার তাকে চিকিৎসা করিয়ে ক্লাসে আসার পরামর্শ দেন। কাশি সারলে দিন কয়েক পরে ফের সে স্কুলে যায়। কিন্তু তাকে ক্লাস করতে বারণ করে ক্লাস-টিচার তাকে প্রধান শিক্ষিকার কাছে নিয়ে যান। মেয়েটির কথায়, ‘‘আমার থেকে ওঁরও রোগ ছড়াতে পারে, এ কথা বলে বড়দি স্কু‌ল থেকে তাড়িয়ে দেন।’’

গত ২ ডিসেম্বর মেয়েটির মা মারা যান। তার ভ্যানচালক বাবা এখনও সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সেই কারণে স্কুলে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা মেয়েটি প্রথমে বাবাকে জানায়নি। প্রতিদিনই সে স্কুলের গেট থেকে ফিরে পড়াশোনা করেছেন গ্রামের লাইব্রেরিতে। এর মধ্যে চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে সে চিকিৎসককেও দেখিয়েছে। চিকিৎসক তার কোনও অসুস্থতা পাননি বলেও মেয়েটির দাবি। ওই গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক অসীম পালও বলেন, ‘‘স্কুল নিজের দায়িত্ব পা‌‌লন না করে মেয়েটির উপর মানসিক নির্যাতন করেছে।’’

বুধবার বাবাকে সমস্যার কথা খুলে বলে মেয়েটি। বৃহস্পতিবার মেয়েকে নিয়ে তিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায়ের কাছে যান। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা বর্বরতার নামান্তর। পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষিকারা কী করে বলেন, যক্ষ্মা হয়েছে! মেয়েটির যে ক্লাস নষ্ট হল, তার দায় শিক্ষিকারা নেবেন? স্কুলের ভূমিকার প্রতিবাদে যা করার করব।’’

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সাধারণত এক সপ্তাহ কারও কাশি থাকলে কফ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে মেয়েটির কফ স‌ংগ্রহ করে পরীক্ষা করানো হবে। তা হলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Class teacher Student Cough
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy