Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
আইন মানা নিয়ে প্রশ্ন, অতিষ্ঠ পরীক্ষার্থী

পরীক্ষার মুখে মাইক-জুজু

এলাকায় দিনরাতের ক্রিকেট হবে। জানান দিচ্ছে মাইক। বইমেলায় হরেক প্রতিযোগিতার আসর। মাইক ফুঁকছেন ঘোষক।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও নুরুল আবসার
চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪১
Share: Save:

এলাকায় দিনরাতের ক্রিকেট হবে। জানান দিচ্ছে মাইক। বইমেলায় হরেক প্রতিযোগিতার আসর। মাইক ফুঁকছেন ঘোষক।

শীতের রোদে বনভোজন। মাইক-ডিজে না-হলে চলে!

পরীক্ষার মরসুম শুরু হল বলে। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক। রয়েছে মাদ্রাসার পরীক্ষা, উচ্চ মাধ্যমিক, দিল্লি বোর্ডের পরীক্ষা...। অথচ, দুই জেলাতেই মাইক ব্যবহারে লাগাম নেই। কিন্তু এ জন্য আইন আছে। আইনের রক্ষকও আছে। কিন্তু ক’জন অনুষ্ঠান-আয়োজক তা মানছেন, এ প্রশ্ন উঠছে। মাইকের অত্যাচারে পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা লাটে ওঠার উপক্রম। তিতিবিরক্ত অভিভাবকেরা।

পাঁচলার একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শঙ্কর খাঁড়ার ক্ষোভ, ‘‘আমাদের কাছে বহু পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা মাইকের জন্য পড়াশোনার অসুবিধা হচ্ছে বলে নালিশ করেন।’’ চণ্ডীতলার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আইভি দত্ত আতঙ্কে রয়েছে। তার কথায়, ‘‘সামনে ভোট। মাইকের আরও বাড়বাড়ন্ত হল বলে!’’

হাওড়ার বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা, জগৎবল্লভপুর, ডোমজুড় বা শ্যামপুরই হোক কিংবা হুগলির শিল্পাঞ্চল— ছবিটায় বিশেষ তারতম্য নেই। মাইকের ব্যবহার কোথাও একটু কম, কোথাও বেশি। এই শীতের মরসুমে ফুলমেলা, বইমেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশু উৎসব, দিনরাতের ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতা— কী নেই। আর রয়েছে পিকনিক। আর সবেতেই অপরিহার্য মাইক। সন্ধ্যার পর থেকে তো বহু জায়গায় মাইকের শব্দে কান পাতা দায় হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ। অথচ, তখন পরীক্ষার্থীদের পড়ার সময়।

হুগলির উত্তরপাড়ার কথাই ধরা যাক। শহর জুড়ে এখন হরেক অনুষ্ঠান চলছে। জিটি রোডের ধারে পুরসভার সোমনাথ শিশু উদ্যানে মেলা বসেছে। কয়েক হাত দূরে ভদ্রকালী মিলনী মাঠেও আর একটি মেলা। স্টেশন লাগোয়া সিএ মাঠে বসেছে খেলার আসর। টিএন মুখার্জি রোডের একটি মন্দির লাগোয়া ছোট মাঠে চলছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান। কোনও ক্ষেত্রেই মাইকে লাগাম নেই বলে অভিযোগ। ক’দিন আগেই বাগনানের একটি শিশু উৎসবে গ্রাম জুড়ে মাইক লাগানো হয়েছিল। মঞ্চে ছিল বক্স। সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মাইক বেজেছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, তাঁরা পুলিশকে মৌখিক ভাবে জানিয়ে মাইক বাজিয়েছেন।

অথচ, মাইক ব্যবহারে লাগাম পরাতে সরকারের আঁটোসাঁটো বিধি রয়েছে। কিন্তু একদিকে সচেতনতার অভাব এবং অন্যদিকে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অনীহার জেরেই মাইক ব্যবহারকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেলা, অনুষ্ঠান হচ্ছে বলে কেন আইন ভাঙতে হবে? শিক্ষিত সমাজে সবাই একটু সচেতন হলেই তো হয়। ছেলেমেয়েরা জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, তাদের কথা কেউ ভাবব না? মাইকের বেলাগাম ব্যবহারে পরিবেশে মারাত্মক কুপ্রভাব পড়ছে, মানুষের অসুস্থতাও বাড়ছে। পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতা মানা যায় না।’’

মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের মতো বড় পরীক্ষার তিন দিন আগে থেকে পরীক্ষা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয় না প্রশাসন। কিন্তু তার আগে-পরে? মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত এবং পুর এলাকায় বিধি একটু আলাদা। সেই বিধিই অনুসরণ করা হয় বলে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি। তা হল, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মাইক বাজানো যাবে। শব্দের মাত্রা থাকবে ৬৫ ডেসিবেল পর্যন্ত।

কিন্তু তা সর্বত্র কতটা মানা হয়, সে প্রশ্ন থাকছেই। অনেক অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা অতিথি হিসাবেই উপস্থিত থাকেন। ফলে, উদ্যোক্তারা পার পেয়ে যান বলে দাবি এক অভিভাবকের। হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শান্তনু সিংহ বলেন, ‘পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্বেও মাইক বাজানো নিয়ে কোনও পরীক্ষার্থী অভিযোগ জানালে আমরা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলি।’’ হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মার দাবি, ‘‘অভিযোগ পেলেই আমরা মাইক বন্ধ করে দিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিই। একাধিক থানায় এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে। আমাদের কড়া নজরদারি আছে।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘বিনা অনুমতিতে মাইক বাজালে বা অনুমতি নিয়েও আইন ভাঙলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। বেআইনি ভাবে মাইক বাজানো হলে পুলিশকে জানানো জরুরি।’’

কিন্তু অভিভাবকদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, রাস্তাঘাটে মাইকের বিকট আওয়াজ কি পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের কানে আসে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

students Mic Program
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE