আমার মতো মানুষ ঘরের ভিতরে বসে আছে!
এটা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তবে, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে দেশের আইন মেনে চলতেই হবে। এটা আমার কর্তব্যও বটে। ফলে, ঘরবন্দি থাকা আমার পক্ষে কষ্টদায়ক হলেও চরম বাস্তব।
নিজের স্বভাব যদি আমাকে এক কথায় বলতে হয়, তা হল— এই ৬৯ বছর বয়সেও আমি বেজায় ছটফটে। দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। উলুবেড়িয়া পুরসভার চেয়্যারম্যানের দায়িত্ব সামলেছি এক বছরের জন্য। মানুষের কাছে প্রয়োজনে ছুটে যাওয়ার প্রবণতা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমার বাড়িতে যেমন বহু মানুষ আসেন, নানা প্রয়োজনে তেমন আমিও সকাল-বিকেল ছুটে যাই তাঁদের বাড়িতে। লকডাউন চলার পর থেকে সব বন্ধ।
প্রতিদিন বাড়ির বাইরে মুম্বই রোডের ধারে প্রাতর্ভ্রমণ আমার অভ্যাস ছিল। তা এখন শিকেয়। বাড়ির ভিতরেই সেরে নিই সেই কাজ। নিমদিঘি বাজারে গিয়ে নিজের হাতে বাজার করা, মাছের কানকো উল্টে দেখে কেনাও আমার দীর্ঘদিনের শখ বলা চলে। বন্ধ তা-ও।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বাগানে পায়চারি করি। আমার পাঁচিলের গেটে তালা মারা। সকাল থেকেই গেটের বাইরে নানা মানুষ তাঁদের প্রয়োজনে ভিড় করছেন। গেটের এ পার থেকেই পরামর্শ দিচ্ছি। জানিয়ে দিচ্ছি, এরপর থেকে তাঁরা যেন আমায় ফোন করেন।
আমার বাগানে অনেক ফুল-ফলের গাছ আছে। সেগুলির পরিচর্যার জন্য মালি আছেন। লকডাউনের জন্য তাঁদের ছুটি দিয়েছি। ফলে, গাছগুলিকে এখন নিজের হাতে পরিচর্যা করতে হচ্ছে। আর সেটা করতে গিয়ে যেন গাছগুলির উপরে মায়া আরও বেড়ে গিয়েছে। লকডাউনের সময়ে এটা একটা বড় পাওনা আমার কাছে।
দুপুরে কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। বিকেলে উঠে বই পড়ি। অনেক দিন পরে এই রকম অখণ্ড অবসর পেয়েছি। পেশায় স্কুল-শিক্ষক ছিলাম। রাজনীতি, শিক্ষকতা সব মিলিয়ে বই পড়ার জন্য আলাদা করে সময় কোনও দিন বের করতে পারিনি। অথচ বছরের পর বছর আমি কিন্তু বই কিনে আলমারি ভর্তি করেছি। লকডাউনে ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় সেই বই এখন সঙ্গী। একদিন পড়লাম পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’। কিছুটা পড়ার পরেই চার দেওয়ালের বন্ধ ঘরে বসে চিনলাম সারা ভারতবর্ষকে।
নতুন অভিজ্ঞতা হল।
(উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা। প্রাক্তন শিক্ষক, উলুবেড়িয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy