Advertisement
E-Paper

বিদেশ থেকে ফিরে বাড়িতে, হাসপাতালে পাঠাল পুলিশ

বিদেশ থেকে সদ্য যাঁরা ফিরেছেন, তাঁরা চিকিৎসকে দেখান। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। প্রয়োজনে কয়েকটা দিন বাড়িতেই কাটান। উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবহিন্দমোটরের এক বাসিন্দা উত্তরপ্রদেশ থেকে সদ্য ফিরেছেন। তাঁর গায়ে জ্বর ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৩:৩৭
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

বিদেশ বা ভিন্‌ রাজ্য থেকে ফেরার পরে এক শ্রেণির মানুষ এখনও বেপরোয়া! দুই জেলাতেই তাঁদের হাসাপাতালে নিয়ে যেতে হল পুলিশকে।

হিন্দমোটরের এক বাসিন্দা উত্তরপ্রদেশ থেকে সদ্য ফিরেছেন। তাঁর গায়ে জ্বর ছিল। গৃহ চিকিৎসক তাঁকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যাননি। প্রতিবেশীদের অনুরোধও শোনেননি। শেষে, বিষয়টি স্থানীয় পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের কানে পৌঁছয়। তিনি উত্তরপাড়া থানার আইসি সুপ্রকাশ পট্টনায়েককে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। তার পরেই পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

কোতরংয়ের একটি অভিজাত আবাসনের তিন বাসিন্দাকে নিয়েও চিন্তিত স্থানীয় বাসিন্দারা।

তাঁরা জানান, ওই তিন জন মালয়েশিয়া, লন্ডন এবং দুবাই গিয়েছিলেন। সম্প্রতি ফিরেতাঁরা শহরময় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পুলিশ এবং পুর কর্তৃপক্ষের কানে ওই খবর পৌঁছেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, বিষয়টি দেখা হচ্ছে। একই অভিযোগ উঠেছে কোন্নগরের নবগ্রামের এক মহিলার বিরুদ্ধেও। কোন্নগরের ক্রাইপার রোডের অভিজাত পাড়াতেও একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, শ্রীরামপুরের এক চিকিৎসক সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছেন। কিন্তু তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে যেতে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি জেনে পুলিশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁকে হাসপাতালে যেতে বলা হয়। স্থানীয় মানুষজন বলছেন, বিদেশ থেকে ফেরার পরে হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়ে নিলেই নিশ্চিন্তে থাকা যায়। কিন্তু কেউ কেউ তা না করায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনই ভরসা।

বিদেশ থেকে ঘরে ফেরা শ্রীরামপুরের এক যুবককে শুক্রবার শহরের ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, তাঁর শরীরে করোনার কোনও লক্ষণ নেই। একই ভাবে বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত এক তরুণীকেও ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনিও সুস্থ বলে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ওয়ালশ হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে আমাদের এখানে বেশ কয়েক জনকে পরীক্ষার জন্য আনা হয়েছিল। কারও শরীরেই করোনার উপসর্গ মেলেনি। কয়েক জনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’

কোন্নগরের পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সচেতনতাই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র রাস্তা। বিদেশ থেকে ফেরার পরে হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়ে নিলে ক্ষতিটা কোথায়! সমস্যা না থাকলে জোর করে তো আর আটকে রাখা হবে না। মানুষকে এই বিষয়টা বুঝতে হবে।’’ উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপবাবু বলেন, ‘‘বিদেশ থেকে সদ্য যাঁরা ফিরেছেন, তাঁরা চিকিৎসকে দেখান। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। প্রয়োজনে কয়েকটা দিন বাড়িতেই কাটান।’’

ইতালি ফেরত চুঁচুড়ার এক যুবককে বুধবার রাতে ইমামবাড়া সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর জ্বর হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তাঁর লালারস, রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। শুক্রবার রিপোর্ট পাওয়ার পরে জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ওই যুবকের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মেলেনি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জ্বরের চিকিৎসা করে ওই যুবককে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।’’

খানাকুলের শাবলসিংহপুরের এক যুবককে কাশতে দেখে শুক্রবার এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। দিন তিনেক আগে তিনি মুম্বই থেকে ফিরেছেন। পুলিশ গিয়ে তাঁকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে। মহকুমা (আরামবাগ) স্বাস্থ্য আধিকারিক সিদ্ধার্থ দত্ত জানান, ওই যুবকের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া গিয়েছে। তাঁকে হোম কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। বেঙ্গালুরু থেকে ফেরা এক শ্রমিককে নিয়েও অসন্তোষ দানা বাঁধে গোঘাটের মাধবপুর গ্রামে। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশ যায়। তাঁকেও ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ রাখা হয়।

ভিন্ রাজ্য এবং বিদেশ থেকে ঘরে ফেরা দুই যুবককে নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় বাগনানের দুই গ্রামেও। মির্জাপুর গ্রামের এক যুবক দু’দিন আগে রাজস্থানের জয়পুর থেকে ফেরেন। বৃহস্পতিবার তিনি গ্রামে ঘোরাঘুরি করতে থাকায় গ্রামবাসীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁরা তাঁকে জোর করে ধরে মুগকল্যাণ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাঁকে হোম কোয়রান্টিনে রাখার কথা বলা হয়। তখন গ্রামবাসীরা তাঁকে ফের ধরে এনে তাঁর ঘরে ঢুকিয়ে দেন। ওই দিন দুপুরেই পিপুল্যান গ্রামের এক যুবকও দুবাই থেকে ফিরে গ্রামে ঘোরাঘুরি করছিলেন। গ্রামবাসীরা তাঁকে ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকেও হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু শুক্রবার ফের তাঁকে গ্রামে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেলে গ্রামবাসীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে তাঁকে নিয়ে গিয়ে উলুবেড়িয়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের কোয়রান্টিন ওয়ার্ডে পাঠায়।

Coronavirus Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy