Advertisement
E-Paper

বাবার কাজ ঘাড়ে নিয়েও পড়ায় ফাঁকি নেই মেয়ের

তবে এ বারই প্রথম নয়। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়েও বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় কিছু দিনের জন্য সুনেত্রা এই দায়িত্ব সামলেছেন।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৩৪
ভোরে কাগজ ফেরি করছেন  সুনেত্রা। —নিজস্ব চিত্র

ভোরে কাগজ ফেরি করছেন সুনেত্রা। —নিজস্ব চিত্র

সাইকেল চালিয়ে গলদঘর্ম হয়ে তাঁর বাড়ি ঢুকতে সকাল ৮টা বাজে। ঢুকেই গ্লাভস, মাস্ক খুলে সটান মোবাইল নিয়ে বসে পড়া। গেম বা সোশ্যাল মিডিয়া নয়, তাঁর চোখ শিক্ষক আর সহপাঠীদের ভিডিয়ো গ্রুপে। পড়ায় ফাঁকি নয়।

মাসখানেক ধরে এটাই রুটিন হয়ে গিয়েছে রিষড়ার মোড়পুকুর বকুলতলার বাসিন্দা বছর উনিশের সুনেত্রা দত্তের। তাঁর বাবা শৈবাল দত্ত খবরের কাগজের হকার। লকডাউন ঘোষণার কয়েক দিন আগে তাঁর হাত ভাঙে। অস্ত্রোপচার করাতে হয়। তখন থেকেই মা নীতাদেবীর সঙ্গে বাবার কাজ ভাগ করে নেন সুনেত্রা। ভোর থেকে শুরু হয়ে যায় দুই নারীর সংগ্রাম। বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ পৌঁছে দেওয়া।

তবে এ বারই প্রথম নয়। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়েও বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় কিছু দিনের জন্য সুনেত্রা এই দায়িত্ব সামলেছেন। তিনি এখন হাওড়ার একটি সরকারি পলিটেকনিক কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। লকডাউনে কলেজ ছুটি। কলেজ বা গৃহশিক্ষকের পড়া চলছে অনলাইনে। তাঁর কথায়, ‘‘খবরের কাগজ দিতে দেখে অনেকে ভাবেন, আমি বোধহয় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি। পড়াশোনা সামলে কী কাজ করা যায় না!’’

বাড়ি থেকে ভোর ৫টা নাগাদ বেরোতে হয়। এক কিলোমিটার দূরে রিষড়া স্টেশন অথবা আরও কয়েক মাইল তফাতে জিটি রোডের ধারে কাগজ আসে। সেগুলি সংগ্রহ করে পঞ্চাননতলা, মোড়পুকুর, বামুনারির ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন মা-মেয়ে। নীতাদেবী হেঁটে। সুনেত্রা সাইকেলে। দু’জনে প্রতিদিন প্রায় ১২৫টি কাগজ বিলি করেন। রবিবার আরও গোটা পঞ্চাশ বাড়ে। রোজগার খুব বেশি নয়। তাতেই চলে সংসার।

কাগজ দিয়ে বাড়ি ফিরতে সুনেত্রার সকাল ৮টা বাজে। যে দিন তাঁর আগে পড়ার সূচি থাকে, সময়ে ‘ক্লাস অ্যাটেন্ড’ করতে সে দিন সাইকেলের প্যাডেলে আরও জোরে চাপ দেন তিনি। মাঝেমধ্যে পড়াশোনা করতে রাত হয়। পর দিন কাকভোরে উঠে ফের লড়াই।

নীতা বলেন, ‘‘স্বামীর হাত ভাঙার পরে যখন কাগজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, মেয়ে সঙ্গ নিল। বাড়ি ফিরে আমি ঘরের কাজ শুরু করি। মেয়ে আমার সঙ্গে ঘরের কাজও করে।’’ স্ত্রী-মেয়ের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই বলে জানিয়েছেন শৈবালবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েরা সত্যিই সব পারে।’’

সুনেত্রার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বারাসত বিশ্ববিদ্যা‌লয়ের এডুকেশন বিভাগের শিক্ষক অভিজিৎ পাল। তিনি মোড়পুকুরেরই বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটির এই অনমনীয়, লড়াকু মানসিকতা দেখে সত্যিই ভাল লাগে।’’ সুনেত্রার আবৃত্তি-শিক্ষক রূপম বসুও মানছেন, ‘‘ওঁর মানসিকতা শিক্ষণীয়।’’

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy