Advertisement
E-Paper

কড়া নজর ভাবির, ঘর থেকে বেরনোর জো নেই

করোনা-জুজুতে সবাই আতঙ্কিত। তারমধ্যেও কিছু মানুষ করোনার বিরুদ্ধে ‘লড়াই’ জারি রেখেছেন। সন্দেহভাজনদের পরিচর্যা থেকে সচেতনতা প্রচার — সবেতেই সামনে এগিয়ে আসছেন তাঁরা। এমনই ‘করোনা যোদ্ধা’দের কথা আনন্দবাজারে। আরামবাগের হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের শাহবাগ এবং তারাল এলাকায় আমানউল্লা, জাকিরদের মতো ভিন্‌ রাজ্য থেকে সম্প্রতি ঘরে ফেরা সকলেই ‘ভাবি’র ভয়ে তটস্থ।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪৮
প্রশংসনীয়: সচেতনতা প্রচারে আবিদা। —নিজস্ব চিত্র

প্রশংসনীয়: সচেতনতা প্রচারে আবিদা। —নিজস্ব চিত্র

শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন আমানউল্লা মল্লিক। কথাটা ‘ভাবি’র কানে পৌঁছে যাওয়ায় ‘ছক’ বানচাল। ঘরে থাকার একঘেয়েমি কাটানোর জন্য শেখ জাকির হোসেন বিকেলে একটু পাড়া বেড়ানোর জন্য মোটরবাইকে স্টার্ট দিতে না দিতেই ‘ভাবি’ হাজির। বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে আমতা আমতা করে ঢুকে পড়তে হল ঘরে।

আরামবাগের হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েতের শাহবাগ এবং তারাল এলাকায় আমানউল্লা, জাকিরদের মতো ভিন্‌ রাজ্য থেকে সম্প্রতি ঘরে ফেরা সকলেই ‘ভাবি’র ভয়ে তটস্থ। ঘর থেকে বেরোলেই ‘ভাবি’র শাসন! কথা না শুনলে পুলিশ ডাকছেন। পঞ্চায়েত প্রধান, মসজিদের ইমামকেও হাজির করে তটস্থ করে তুলছেন! ওই গ্রামে ‘হোম কোয়রান্টিনে’ থাকা লোকজনকে এ ভাবেই কড়া পাহারায় রেখেছেন ‘ভাবি’ অর্থাৎ আশাকর্মী আবিদা খাতুন।

গ্রামগঞ্জে হোম কোয়রান্টিনে থাকা লোকজনের গতিবিধি সত্যিই বাড়ির ভিতরে সীমাবদ্ধ কি না, তা দেখার দায়িত্ব আশাকর্মীদের। এক অর্থে তাঁরাই গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য দফতরের চোখ। সেই দায়িত্বই বাড়তি উদ্যমে পালন করছেন আবিদা।

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই এলাকায় লোকসংখ্যা ১২৪৩ জন। ভিনরাজ্যে কাজ করেন ১৫৫ জন। করোনা পরিস্থিতিতে তাঁদের মধ্যে ১৮ জন গ্রামে ফিরে এসেছেন। স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনের নির্দেশ দেয়। বছর তেতাল্লিশের আবিদা প্রতিদিন সকাল-বিকেল কয়েক ঘণ্টা গ্রামে ঘোরেন। কোয়ারন্টিনে থাকা লোকেদের খবর নেন। কারও জ্বর-সর্দি-কাশি বা অন্য কোনও অসুস্থতা আছে কি না, সেই ব্যাপারে খোঁজ নেন। নির্দেশ ভেঙে কেউ বাড়ি থেকে বেরোলেই আবিদা ‘খড়্গহস্ত’।

রাজস্থানের জয়পুরে সোনারুপোর কাজ করেন আমানউল্লা মল্লিক। গত ২০ মার্চ সেখান থেকে ফিরে হোম কোয়রান্টিনে ছিলেন। দিন কয়েক আগে ওই পর্ব শেষ হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভাবির নজর এড়িয়ে বেরনোর জো ছিল না। ঠিক করেছিলাম, শ্বশুরবাড়ি যাব। ওখানে ফোন করে ভাবি বলে দেন, ১৪ দিন আমাকে যেন ঢুকতে না দেওয়া হয়। আমার পুরো পরিবারকেই ভাবি বিষয়টা বুঝিয়ে ছেড়েছেন।’’

কলকাতার নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী খলিল মল্লিকেরও হোম কোয়রান্টিন পর্ব সদ্য শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘হাসিমুখে অথচ অত্যন্ত কড়া শাসনে রেখেছিলেন ভাবি।’’ খলিলের সংযোজন, ‘‘রাত-বিরেতে কারও দরকার হলেও ভাবি হাজির

হয়ে যান। এখন সঙ্কটের দিনেও সকলের ভালর জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন। ওঁর কথা অমান্য করা যায় না।’’ গত ২২ মার্চ মুম্বই থেকে ফেরেন শেখ জাকির হোসেন। তিনি বলছে‌ন, ‘‘প্রথম দিকে লুকিয়ে বেরনোর চেষ্টা করেছিলাম। দেখি, ভাবি পুলিশ, পঞ্চায়েত প্রধানকে ডেকে এনেছেন। ওঁর কথায়

মসজিদের ইমাম এসেও সাবধান করে যান। আর বেরনোর সাহস হয়নি।’’ সুকুর আলি, শেখ সামিনুররা, তানজির আলিরাও বলছেন, আবিদা নিজের দায়িত্বে অবিচল।

চায়ের দোকানে জমে ওঠা আড্ডাও ফাঁকা হয়ে গিয়েছে আবিদাকে দেখে। অকারণ জমায়েত দেখলে ‘সমঝে’ দিয়েছেন। পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল আজিজ বলেন, ‘‘ওই আশাদিদি অত্যন্ত সক্রিয়। ওঁর কথা সবাই মানেন। হরাদিত্য, মজফ্ফরপুর, অরুন্ডা গ্রামেও তাঁকে তদারকি করার অনুরোধ করেছি।’’ করোনা-সংক্রান্ত সচেতনতার কাজে আবিদার ভূমিকার প্রশংসা করছেন ব্লক স্বাস্থ্য দফতর, আরামবাগ থানার আধিকারিকরাও।

আশাকর্মীদের স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ, বাড়ি থেকেই কাজ করতে হবে। তাও ঝুঁকি নিয়ে কেন ঘুরছেন? আবিদার জবাব, ‘‘যথেষ্ট সাবধান হয়েই ঘুরছি। গ্রামকে রক্ষা করতে হলে বাড়িতে বসে কাজ চলে!’’ তাঁর বক্তব্য, কোয়রান্টিন বা লকডাউনের গুরুত্ব অনেকে বুঝছিলেন না। বিধিনিষেধ মানছিলেন না। তাই সবাইকে বোজানোর চেষ্টা করেছেন। কোয়রান্টিনে থাকা কেউ বাইরে বেরোলে বাড়ির লোক বা পড়শিরাই তাঁকে জানিয়ে দিচ্ছে‌ন। তিনি সেই মতো ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

আবিদার স্বামী শেখ মহম্মদ ইবনুল হাসান বলেন ‘‘করোনা মোকাবিলায় স্ত্রীর উদ্যোগকে পুরোপুরি সমর্থন করছি। ওর পাশে আছি।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy