Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বৈঁচিতে মদ্যপদের হাতে প্রহৃত দম্পতি

প্রতিবাদ করতেই শুরু মার

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পান্ডুয়ার বৈঁচি বেড়েলা কোচমালি গ্রাম পঞ্চায়েতের গোয়ালাপুকুর গ্রামের বাসিন্দা তপন রায়। রবিরার রাত আটটা নাগাদ প্রতিদিনের মত তপনবাবু বাড়ির পাশের ফাঁকা মাঠের ধার দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।

আক্রান্ত: এইখানেই বসেছিল মদের আসর। ছবি: সুশান্ত সরকার

আক্রান্ত: এইখানেই বসেছিল মদের আসর। ছবি: সুশান্ত সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০১:০৮
Share: Save:

বাড়ির কাছেই নিত্যদিন মদ, গাঁজার আসর বসত। পেশায় হকার তপন রায় তার প্রতিবাদ করতেন। গাঁজার গন্ধে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা ঘরে পড়াশোনা পর্যন্ত করতে পারত না। রবিবার রাতে তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। ফের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। আর তাতেই আগুনে ঘি-পড়ে। শুধু তপনবাবু নন, তাঁর স্ত্রী এমনকী ছেলেমেয়েদের পর্যন্ত মারধর করা হয়।

প্রতিবাদী তপনবাবু হাসপাতালে ভর্তি। গোটা রায় পরিবার এখন দুষ্কৃতীদের হুমকির মুখে পড়ে ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে। ওই রাতেই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের কথা জানিয়ে পান্ডুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। হুগলি জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুকেশ জৈন অবশ্য বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। এলাকায় পুলিশি টহল জারি রয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পান্ডুয়ার বৈঁচি বেড়েলা কোচমালি গ্রাম পঞ্চায়েতের গোয়ালাপুকুর গ্রামের বাসিন্দা তপন রায়। রবিরার রাত আটটা নাগাদ প্রতিদিনের মত তপনবাবু বাড়ির পাশের ফাঁকা মাঠের ধার দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন গ্রামেরই কয়েকজন ছেলে ফাঁকা মাঠে মদ, গাঁজার আসর বসিয়েছিল। তপনবাবুর অভিযোগ, ওই যুবকরা নেশা করছিলেন। তপনবাবু তাদের বাড়ি লাগোয়া জায়গায় নেশা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু ওই প্রতিবাদ তারা
ভালভাবে নেয়নি।

পরিজনদের সঙ্গে প্রহৃত তপন রায়। ছবি: সুশান্ত সরকার

অভিযোগ, তার পরেই ওই যুবকেরা প্রথমে কিল, চড়, ঘুঁষি মারতে থাকে। পরে লাঠি, লোহার রড দিয়ে তাকে মারে। সেই আঘাতে তপনবাবুর মাথা ফেটে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তপনবাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তপনবাবুর স্ত্রী অসীমা রায় আর আঠারো বছরের মেয়ে প্রমিতা, বাবাকে বাঁচাতে ছুটে আসেন। তাতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তারা। নেশাগ্রস্ত যুবকেরা বাধা পেয়ে প্রহৃতের স্ত্রী ও মেয়েকেও বেদম মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ।

তপনবাবুর স্ত্রী অসীমাদেবী বলেন, ‘‘ওই ছেলেগুলো আমাদের পাড়ারই। ওদের মারধর করতে বারণ করেছিলাম আমার স্বামীকে। তাতে আমাকেও ওরা বেধড়ক মারধর করে। আমার কাপড় ছিঁড়ে দেয়। এমনকি আমার মেয়ে, ছেলেকেও লাঠি দিয়ে মারে ওরা।’’ তখন তপনবাবু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অসীমাদেবী বলেন,‘‘ওই রাতেই পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে স্বামীকে নিয়ে যাই। স্বামীর মাথায় তিনটি সেলাই হয়েছে।’’

মেয়ে প্রমিতা রায় বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ির পাশেই রোজ মদ, গাঁজার আসর বসে। কোনও প্রতিকার নেই। পাড়ার ছেলেদের বাবা নিষেধ করত। কিন্তু কিছুতেই বাবার কথা কানে নিত না। আমরা মদ, গাঁজার গন্ধে বাড়িতে টিকতে পারি না। বাবা প্রতিবাদ করে এখন হাসপাতালে।’’ প্রমিতার আরও অভিযোগ, ‘‘ঘটনার পর বাড়িতে এসে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আমাকে শ্লীলতাহানি ও খুনের হুমকি দিয়েছে। দাদা (কিশোর রায়) খন্যান কলেজে পড়ে। ওকেও মারবে বলছে। আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। পুলিশকে জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Couple Beaten Drunk দম্পতি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE