এক সিপিএম কর্মীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তৃণমূলের এক নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার সকালে আরমাবগের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘিয়া গ্রামে ওই ঘটনায় মৃতের নাম শেখ আব্বাস আলি (৩৬)। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যকালীন জবানবন্দির ভিত্তিতেই শেখ নুরুল ইসলাম নামে ওই স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার সিপিএম কর্মী শেখ আব্বাস ঘুরে ঘুরে ভাঙা-বাতিল লোহা লক্কর কেনা বেচা করে সংসার চালাতেন। কখনও দিনমজুরিও করতেন। অভিযুক্ত শেখ নুরুল চাষবাস করার পাশাপাশি দিনমজুরিও করে। শেখ আব্বাসের স্ত্রী নাজমা বেগমের অভিযোগ, তাঁর স্বামী সাদাসিদে মানুষ ছিলেন। তৃণমূলের নুরুল প্রায়ই এসে স্বামীকে আড়ালে ডেকে নিয়ে কথা বলত। স্বামীকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কিছু বলতেন না। শুধু বলতেন ভয় দেখাচ্ছে-হুমকি দিচ্ছে। তবে তুমি এ সব নিয়ে ভেব না।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ নিজের ঘরে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে বাইরে বেরিয়ে চিৎকার করতে থাকেন আব্বাস। ছুটে আসেন পড়শিরা। চিৎকার করতে করতেই আব্বাস বলতে থাকেন নুরুলের জন্যই আমাকে আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। ও আমাকে বাঁচতে দেবে না’। পড়শিরাই থানায় খবর দিয়ে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় আব্বাসকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান। সেখানে পুলিশকে আব্বাস বলেন, ‘‘ কচির (শেখ নুরুল ইসলামের ডাক নাম) আমাকে বাঁচতে দিল না। লাগাতার হুমকি দিচ্ছি, টাকা চাইছে।’’ এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়।
শেখ আব্বাসের দাদা সাহেব আলি পুলিশের কাছে ভাইকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন শেখ নুরুলের বিরুদ্ধে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য তথা আরামবাগের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘‘আব্বাস আমাদের সক্রিয় কর্মীই শুধু নয়। ওই এলাকায় দলের সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মী ছিলেন। নুরুল ইসলামরা তাঁকে সিপিএম ছাড়ার জন্য লাগাতার হুমকি দিলেও তিনি রাজি হননি। যে ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে কী ভাবে তাঁর উপর সীমাহীন মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। পুরো ঘটনার তদন্তের দাবি করছি আমরা।’’
আরামবাগ বিধায়ক তৃণমূলের কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, ‘‘যা খবর পেয়েছি, তাতে ওদের দু’জনের মধ্যে আর্থিক লেনদেন নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। রাজনৈতিক কারণ ছিল না। আমরাও চাই পুলিশ তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করুক।’’
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ধৃত নুরুলকে জেরা করে তারা জানতে পেরেছে, অতীতে (রাজ্যে সিপিএম ক্ষমতায় থাকাকালীন) তার বিবাহ বহির্ভূত একটি সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে শেখ আব্বাস সালিশি করেছিলেন। সেই বিচার নুরুলের বিপক্ষে গিয়েছিল এবং তাকে জরিমানাও দিতে হয়েছিল। অভিযোগ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সেই টাকাই সুদ-সহ ফেরতের দাবি করে লাগাতার আব্বাসকে হুমকি দিচ্ছিল নুরুল। যদিও কত টাকা তা জানাতে পারেনি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy