Advertisement
E-Paper

গ্রামীণ হাওড়া পুরো ধ্বংসস্তূপ

লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। একটিও পান বরজ আস্ত নেই। ফুল চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৬:২৯
উলুবেড়িয়া রাজাপুর থানা এলাকায় দুলোপুরে ঘর ভেঙে পড়েছে। ছবি: সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া রাজাপুর থানা এলাকায় দুলোপুরে ঘর ভেঙে পড়েছে। ছবি: সুব্রত জানা

আমপান কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করল হাওড়া জেলার বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকাকে।

বুধবার রাতের এই বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। লক্ষাধিক বাড়ি আংশিক এবং পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ পড়ে গিয়েছে। লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। একটিও পান বরজ আস্ত নেই। ফুল চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

আমপান নিয়ে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে যে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল, তাতে গ্রামীণ এলাকার শ্যামপুর-১ এবং ২, বাগনান-১ এবং ২ ও উলুবেড়িয়া-১ ব্লক এবং উলুবেড়িয়া পুর এলাকার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, জেলার ১৪টি ব্লকেই তাণ্ডব চালিয়েছে ওই ঝড়।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতেরা হলেন পাঁচলার শুভরয়াড়া গ্রামের সুমার ঢালি (৬৫), শম্ভু পাত্র (৬৬) এবং রাজাপুর থানা এলাকার ভারতী প্রামাণিক (৫৫) এবং রুকসানা বেগম (৩৫)। সুমার পাঁচিল চাপা পড়ে মারা যান। শম্ভুর মৃত্যু হয় বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে। তুলসীবেড়িয়ার বাসিন্দা ভারতী দেওয়াল চাপা পড়ে এবং দুলোপুরের রুকসানা বিদ্যুতের খুঁটির নীচে চাপা পড়ে মারা যান।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শ্যামপুর-১ ব্লকে। এখানে প্রায় ২০ হাজার বাড়ি আংশিক এবং পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরেই আছে উলুবেড়িয়া-১ ব্লক। এখানে প্রায় ৮ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় সবমিলিয়ে মাটির বাড়ি আর একটিও আস্ত নেই বললেই চলে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। আপাতত গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের ত্রিপল দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি ও চাষের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের নির্দেশ মোতাবেক কাজ হবে।

আমতার বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘আমার বিধানসভা কেন্দ্রের বেশিরভাগটাই পড়ে আমতা-২ ব্লকে। এই ব্লক নিয়ে কোনও সতর্কতা ছিল না। কিন্তু ঝড় এই ব্লকেও তাণ্ডব চালিয়েছে। আমি মাটির একচিলতে বাড়িতে থাকি। ঝড়ের দাপটে আমি পাশেই ভাইয়ের বাড়িতে উঠে যেতে বাধ্য হই। বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখি, সব লন্ডভন্ড।’’

ক্ষতির বহর কী রকম, তা বৃহস্পতিবার দেখা গেল শ্যামপুর-১ ব্লকে গিয়ে। শ্যামপুর থেকে গাদিয়াড়া পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তা ঢেকে গিয়েছে ভেঙে পড়া গাছে। সকাল থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর লোকজন গাছ সরানোর কাজ করছিলেন। দুপুর ২টো পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কার করতে পেরেছিলেন তাঁরা। রাস্তার ধারে প্যাঁকাটির মতো ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেল বিদ্যুতের অসংখ্য খুঁটি। ঝুলছিল ছেঁড়া তার। রাস্তার ধারে বহু মাটির বাড়ি বসে গিয়েছে। তার টালি উড়ে গিয়ে পড়েছে পুকুরে।

কম-বেশি সারা জেলার ছবিও এমনই। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জেলার গ্রামীণ এলাকার কোথাও বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার উলুবেড়িয়া ডিভিশন সূত্রের খবর, খুঁটি উপড়ে, তার ছিঁড়ে, ট্রান্সফর্মারে গাছ পড়ে বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। তিন-চার দিন লাগবে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে। বিদ্যুৎ সংযোগ চলে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে, পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দেয়। নলকূপে ভিড় বাড়ে।

Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy