বিপজ্জনক: দু’টি লরির মাঝখান দিয়েই চলছে বাইক রেস। রবিবার, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছে এক একটা গাড়ি। এক আধটা অবশ্য বাঁ দিকে নেমে যাওয়া রাস্তা দিয়ে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষণ সে দিকেই তাকিয়ে থেকে বছর পঁচিশের যুবক বললেন, ‘আজও মনে হয় ওঁরা আসবেন না!’
ওঁরা হলেন, ফেরারি, ল্যাম্বরগিনির মতো বিলাসবহুল গাড়ির সওয়ারি এবং চালক। সপ্তাহের প্রতি রবিবার সকালে তাঁরা একগুচ্ছ দামি গাড়ি নিয়ে হাজির হতেন হুগলির গুড়াপে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারের এক রেস্তরাঁয়। শেষ ছ’মাসে সেই ছবিটাই বদলে গিয়েছে বলে দাবি করলেন রাস্তার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করা যুবক। বললেন, ‘‘আগে একসঙ্গে কত সব দামি গাড়ি আসত! আমিই পার্কিং করাতাম। এখন রবিবার এলে, অপেক্ষা করি। যদি কেউ আসেন।’’
গত ৩ জুন পাকুড়িয়াতে ফেরারির দুর্ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে ছ’মাস। এর পরেও জাতীয় সড়কে কি আর ঝড় তোলে বিলাসবহুল গাড়ি?
রবিবার সকালে দু’নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে হুগলির সেই রেস্তরাঁয় পৌঁছনো গেল, যেখানে ওই দিন লাল রঙের ফেরারি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শিবাজী রায়েরাও। ফেরার পথেই ঘটেছিল ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা। স্থানীয় থেকে বাইকচালক— সকলেরই দাবি, তার পর থেকেই বদলে গিয়েছে রবিবারের সকালে জাতীয় সড়কের ছবিটা। ধুলোর ঝড় তুলে নিমেষে মিলিয়ে যেতে দেখা যায় না ফেরারি, ল্যাম্বরগিনির মতো বিলাসবহুল গাড়ি।
তবে লাগাম টানা যাচ্ছে না বাইকারদের রেসে, মানছেন স্থানীয়েরাও। এ দিন দেখাও গেল সেই দৃশ্য। টোল প্লাজা পার করেই এক ঝাঁক বাইকার দ্রুত গতিতে ছুটে চলা দু’টি লরির মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। চোখের নিমেষে মিলিয়ে গেলেন তাঁরা। ওই রেস্তরাঁতেই দেখা হল বাইকার বিয়াস দেবের সঙ্গে। তরুণীর কথায়, ‘‘আমরা অনেকেই নিয়ম মেনে বাইক চালাই। কিন্তু কয়েক জনের জন্য সকলের বদনাম হচ্ছে।’’
অনেক ক্ষণ অপেক্ষার পরে ওই রেস্তরাঁয় দেখা গেল একটি দামি গাড়ি। তাতে সওয়ার গোপাল দাস, রাহুল কবিরাজেরা জানালেন, কদাচিৎ কোনও রবিবার দু’-তিনটি রেসিং গাড়িকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দেখা গেলেও কেউই রেস করেন না। রেস্তরাঁয় এসে খাওয়া-দাওয়া করে চলে যান তাঁরা। ফেরারির দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন আসনা সুরানা। দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসার পরে এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ। এ দিন দুপুরে সে দিনের রেস্তরাঁতেই খেতে গিয়েছিলেন তাঁর কাকা অতুল সুরানা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ওই গাড়ি নিয়ে প্রতি রবিবার বেরোই। কখনও শহরে, কখনও বা জাতীয় সড়ক ঘুরে রেস্তরাঁয় খেয়ে ফিরে যাই। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছি।’’ যদিও
জীবনের ছন্দই কেটে গিয়েছে ফেরারির দুর্ঘটনায় মৃত শিবাজী রায়ের পরিবারের। স্ত্রী নমিতা বলেন, ‘‘আমাদের পরিবারের শিরদাঁড়াই ভেঙে গিয়েছে। গাড়ি নিয়ে কে বেরোবে?’’
‘‘কোথাও তো তাল কেটেছেই। আগে পরপর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত। কত খদ্দের হত! এখন বিলাসবহুল গাড়ি হাতেগোনা আসে।’’— বলছেন রেস্তরাঁর ম্যানেজার জয়দেব দাস। ডানকুনি টোল প্লাজা পেরিয়ে রাস্তার ধারে চায়ের দোকান তবসুমের। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সব গাড়ির ছবি তুলতে সবাই ভিড় করতেন।’’ ওঁদের দাবি, ছ’মাস আগেও যেখানে কম করে তিরিশটি দামি গাড়ি আসত সপ্তাহান্তে, এখন সংখ্যাটা খুব কম।
বাইকার নীলাদ্রি বসুর কথায়, ‘‘ফেরারি দুর্ঘটনার পরে স্পোর্টস কার বেরোনো কমে গিয়েছে। বাইক রাইডও আগের তুলনায় কমেছে। জাতীয় সড়ক তো রেসের জায়গা নয়! কিন্তু কিছু তরুণ এখনও তাঁদের ইচ্ছে মতো স্পিড তুলে যাতায়াত করছেন। তবে রাস্তায় পুলিশের কড়াকড়িও বেড়েছে।’’
ফেরারির দুর্ঘটনার পরে গতিতে ‘লাগাম’ টানতে পুলিশ যে নড়ে বসেছে এ দিন তার প্রমাণ মিলল। কখনও টহলদারি গাড়ির আনাগোনা, কোথাও আবার নজরমিনারে বসে দূরে নজর রাখছেন পুলিশকর্মীরা। হাওড়া ও হুগলির ক্রসিংয়ে রীতিমতো গাড়ি এবং বাইক থামিয়ে পরীক্ষা করতে দেখা গেল মাইতিপাড়া সাব ট্র্যাফিক গার্ডের কর্মীদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, মোটরবাইক আটকানো সব থেকে মুশকিল। তাঁরা হাত তুলে সঙ্কেত দিলে চার চাকার গাড়ি গতি কমিয়ে দেয়। কিন্তু অধিকাংশ বাইক আরও গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে। সেগুলি ধরতে গেলে বড় বিপদের আশঙ্কা থাকে বলেই মত পুলিশকর্তা থেকে কর্মীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy