Advertisement
E-Paper

বকেয়া নিয়ে বিবাদে পড়ে ৩৩ কোটি

প্রায় দেড় কোটি টাকার কাজ করা হয়েছিল সম্পূর্ণ মৌখিক নির্দেশে। কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি। ঠিকাদারদের দেওয়া হয়নি কোনও ওয়ার্ক অর্ডার। এই অনিয়মের জেরে ঠিকাদারদের বকেয়া মেটাতে অস্বীকার করেছেন বর্তমান বোর্ডের কর্তারা। ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতিতে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০০:৫১

প্রায় দেড় কোটি টাকার কাজ করা হয়েছিল সম্পূর্ণ মৌখিক নির্দেশে। কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি। ঠিকাদারদের দেওয়া হয়নি কোনও ওয়ার্ক অর্ডার। এই অনিয়মের জেরে ঠিকাদারদের বকেয়া মেটাতে অস্বীকার করেছেন বর্তমান বোর্ডের কর্তারা। ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতিতে।

এই পঞ্চায়েত সমিতিতে গত নভেম্বর মাসে অনাস্থা প্রস্তাবে অপসারিত হন সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিম। তারপরে ক্ষমতায় আসে তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর সভাপতি হয়েছেন শেখ হাফিজুল রহমান। ক্ষমতাসীন বর্তমান বোর্ডের অভিযোগ, এইসব অনিয়ম হয়েছে প্রাক্তন সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিমের আমলেই। এই অবস্থায় ঠিকাদারদের বকেয়া মেটাতে অস্বীকার করেছেন বর্তমান বোর্ডের কর্তারা। শুধু তাই নয়, ঠিকাদারদের বকেয়া মেটানোকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে বিবাদে বন্ধ হয়ে গিয়েছে উন্নয়নমূলক কাজ। ৩৩ কোটি টাকা এসে পড়ে থাকলেও তা খরচ করা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে জগৎবল্লভপুরে কেন বরাদ্দ টাকা খরচ হচ্ছে না সে বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত সমিতিতে সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। অনিয়মের বিষয়টি তাঁরা হাতে কলমে দেখেন। সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “বিনা টেন্ডারে, বিনা ওয়ার্ক অর্ডারে যে সব কাজ হয়েছে তার জন্য ঠিকাদারদের কোনও টাকা দেওয়া হবে না।”

সমিতি সূত্রের খবর, সাংসদ কোটা, কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ, তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশনের বরাদ্দ থেকেই মূলত কাজ করা হয়েছে। একের পর এক তৈরি হয়েছে নলকূপ, রাস্তা, স্কুলের অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র প্রভৃতি। এমনকী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চ বাঁধা, চায়ের খরচ, গাড়ির জ্বালানির খরচ সবই হয়েছে এই বরাদ্দ থেকে। কিন্তু নিয়ম মেনে কোনও কাজ হয়নি। একজন ঠিকাদার ৫টি নলকূপ তৈরি করেছেন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। এর জন্য টেন্ডার ডাকা হয়নি। ওই ঠিকাদারকে দেওয়া হয়নি কোনও ওয়ার্ক অর্ডার। এইভাবেই তৈরি হয়েছে রাস্তা, স্কুলের অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ প্রভৃতি।

কী ভাবে হয়েছে এই অনিয়ম?

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন কর্তারা আগেই জেনে নিতেন কবে কোন খাতের বরাদ্দ টাকা পঞ্চায়েত সমিতির তহবিলে ঢুকবে। সেই টাকায় কোন কোন কাজ করা হবে তা ঠিক করতেন তাঁরা। তারপরে ঠিকাদারদের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে কাজ করিয়ে নিতেন। পরে টাকা এলে ঠিকাদারদের বকেয়া মেটানো হত। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে এ ভাবেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় বছরখানেক আগে নতুন বিডিও আসার পর। বিনা টেন্ডারে, বিনা ওয়ার্ক অর্ডারে করা এই সব কাজের জন্য ঠিকাদারেরা পাওনা আনতে গেলে বিডিও তা আটকে দেন। এমনকী বিধি মেনে কাজ করা না হলে টাকা দেওয়া হবে না বলে পঞ্চায়েত সমিতির তাৎকালীন কর্তাদের নির্দেশও দেন তিনি। ঠিকদারদের পাওনা মেটানো নিয়ে বিডিও-র সঙ্গে তৎকালীন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির তুমুল বিবাদ বাধে। পুলিশের কাছে পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান বিডিও। গত বছরের নভেম্বর মাসে অনাস্থা প্রস্তাব এনে সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিমকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলেরই নতুন বোর্ড ক্ষমতায় এলে তাদের কাছে ঠিকাদাররা পাওনা আনতে যান। নতুন বোর্ড পাওনা মেটাতে অস্বীকার করে। একই সঙ্গে আটকে গিয়েছে উন্নয়নমূলক কাজও। মোট ৩৩ কোটি টাকা এসে পড়ে থাকলেও তা খরচ করা যাচ্ছে না। পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান সভাপতি হাফিজুল রহমান বলেন, “আগের বোর্ডের বেআইনি কাজের পাওনা মেটানোর দায় আমরা নেব না।”

যাঁর আমলে এ সব কাজ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ সেই প্রাক্তন সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “সব অভিযোগ মিথ্যা। বেশিরভাগ কাজেরই টেন্ডার হয়েছিল। কয়েকটি নলকূপ বিনা টেন্ডারে জরুরি ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। বিডিও নিজেই তো বিনা টেন্ডারে তাঁর ঘরের পাঁচিল তৈরি করান। আসলে আমাকে সরিয়ে দিয়ে জগৎবল্লভপুরের উন্নয়ন বন্ধ করতেই চক্রান্ত করে এ সব করা হয়েছে।” বিডিও তাপস মহান্তি কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।”

ব্লকের ঠিকাদারদের সংগঠনের নেতা অশোক কুণ্ডু বলেন, “আমরা বরাবরই মৌখিক নির্দেশে কাজ করেছি। পরে টাকা এলে আমাদের তা মিটিয়ে দেওয়া হয়। এটা নতুন নয়। প্রচলিত ধারা।” তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হচ্ছেন তাঁরা।

tender jagatballavpur nurul absar TMC Trinamool BDO southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy