Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Duare Sarkar

দুয়ার না থাকলে কি সাহায্য মেলে না? উত্তর খুঁজছেন আশারানি

চেয়ে চিন্তে ত্রিপল জোগাড় করে চাল ঢাকতে পেরেছিলেন কোনওরকমে। আমপান এসে তা-ও তছনছ করে দেয়।

আশারানির দুয়ারে সরকারি সাহায্য এখনও পৌঁছয়নি। —নিজস্ব চিত্র।

আশারানির দুয়ারে সরকারি সাহায্য এখনও পৌঁছয়নি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:০১
Share: Save:

ভোটের আগে দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে সরকার। দরাজ হস্তে সমাধান বিলোনো হচ্ছে। কিন্তু যাঁদের দুয়ারই নেই, তাঁরা কি কোনও সাহায্যই পাবেন না? চুঁচুড়ার বঙ্কিম কাননের ৭০ বছরের বৃদ্ধা মায়ারানি বিশ্বাস এখন এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে চলেছেন।
মাথার উপর ছাদ বলতে টালির চালের দু’টো ঘর ছিল। আগুন লেগে বছর দুয়েক আগে তা-ও সরে যায়। চেয়ে চিন্তে ত্রিপল জোগাড় করে চাল ঢাকতে পেরেছিলেন কোনওরকমে। বিধবা মেয়ে, দুই নাতি আর এক নাতনিকে নিয়ে তার পর থেকে রোদ-বৃষ্টি সয়েই দিন কাটছে মায়ারানির। রাসমিস্ত্রির কাজে সাহায্য করে দু’পয়সা আয় করেন তাঁর বড় নাতি। মেয়ে সন্ধ্যারানি রাস্তার ধারে বসে সবজি বেচেন। তাতেই সংসার চলে।

নিজেও এত দিন ১০০ দিনের কাজ করতেন মায়ারানি। কিন্তু অসুস্থতার জেরে এখন আর কাজে যেতে পারেন না। চারটে পেটের খাবার জোগাড় করতে তাই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই পোড়া ঘর আর সারানো হয়নি। কিন্তু তাতেও কোনওরকমে মাথা গুঁজে ছিলেন সকলে। কিন্তু আমপান এসে তা-ও তছনছ করে দিয়ে যায়। আমা ধরা ইটের দেওয়াল এখন ভেঙে পড়ার অবস্থা। তার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায়, সপখোপের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হয় সারা ক্ষণ।

এই বাড়িতেই কোনওরকমে মাথা গুঁজে থাকা। —নিজস্ব চিত্র।

এমন পরিস্থিতিতে আবাস প্রকল্পে ঘর পাওয়া যাচ্ছে শুনে ১ নম্বর কোদালিয়া পঞ্চায়েতে হত্যে দিয়েছিলেন মায়ারানি। স্থানীয় বিধায়ক অসিত মজুমদারের কাছেও অনুরোধ জানান। কিন্তু শত চেষ্টা করেও কোনও সুরাহা পাননি তিনি। করোনা কালে চাল-ডাল ছাড়া কোনও সরকারি সাহায্যই হাতে ওঠেনি তাঁর। তাই বৃদ্ধার আক্ষেপ ‘‘সারা জীবন কষ্টেই কাটল। শেষ বয়সে একটা ঘর পর্যন্ত জুটল না।’’ তাঁর মেয়ে সন্ধ্যারানি বলেন, ‘‘ঝড়ের দিন শুধু ভগবানকে ডেকেছি। পঞ্চায়েত থেকে বলা হয়েছিল, ঘর দেওয়া হবে। কবে যে দেওয়া হবে জানি না।’’

এ নিয়ে যোগাযোগ করলে বঙ্কিম কাননের পঞ্চায়েত কর্মী ডলি ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁদের নিয়ে বিডিও অফিসে গিয়েছি। প্রধানকে জানিয়েছি। বিধায়কও জানেন। অনেক চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ঘর এখনও হয়নি। খুবই কষ্টে রয়েছেন ওঁরা। বিপিএল কার্ড পর্যন্ত ছিল না। কাগজে লিখে দিলাম, যাতে বিনা পয়সায় চাল-ডাল অন্তত পান।’’

রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত ভালই সাড়া মিলেছে। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনছেন এবং সাধ্যমতো তার সমাধানও করার চেষ্টা করছেন সরকারি কর্মীরা। কিন্তু আশারানি সেই সুবিধা থেকে ব্রাত্যই রয়ে গিয়েছেন। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অসিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE