Advertisement
E-Paper

এনআরসি তথ্য জোগাড়ে উত্তরবঙ্গে হুগলির দম্পতি

দীপকবাবুর কথায়, ‘‘শুনছি নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হবে। তাতে আমরা যে এ দেশের বাসিন্দা সে প্রমাণ তো জোগাড় করতে হবে। সেই পুরনো নথি আলিপুরদুয়ারেই রয়েছে।’’

পার্থ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২৭
অসহায়: সস্ত্রীক দীপক রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: সস্ত্রীক দীপক রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র

বাবার জমি বেচে দিয়েছিলেন অর্ধ শতক আগে। তার দশ বছর পরে আলিপুরদুয়ার ছেড়ে তাঁরা চলে যান হুগলির কোন্নগরে, পাকাপাকি ভাবে। এখন সেই জমির কাগজ খুঁজতেই হন্যে হয়ে আলিপুরদুয়ারে লোকজনের দোরে দোরে ঘুরছেন সত্তরোর্ধ্ব দীপক রায়চৌধুরী। ক্যানসার আক্রান্ত এই বৃদ্ধের দুশ্চিন্তা এখন একটাই, এনআরসি।

দীপকবাবুর কথায়, ‘‘শুনছি নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হবে। তাতে আমরা যে এ দেশের বাসিন্দা সে প্রমাণ তো জোগাড় করতে হবে। সেই পুরনো নথি আলিপুরদুয়ারেই রয়েছে।’’ কিন্তু এ রাজ্যে এই পঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে কোনও সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারবার বলেছেন, এ রাজ্যে তাঁরা এনআরসি করতে দেবেন না। কিন্তু দীপকবাবু বলেন, ‘‘অসমে হয়েছে। তাই ভয় করছে। যদি হয়ে যায়, তখন কী করব? এখনও শরীর চলছে, তাই ছুটে এসেছি।’’

দীপকবাবুর জন্ম জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়িতে। তবে স্কুল-কলেজে পড়েছেন আলিপুরদুয়ার শহরেই। শহরের বাবুপাড়ায় তাঁদের পৈত্রিক জমি ছিল। পারিবারিক কারণে ১৯৬৯ সালে যা বিক্রি করে দেন। ১৯৭৮ সালে চাকরি সূত্রে আলিপুরদুয়ার ছাড়েন এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী দীপক। পরে কোন্নগরে জমি কেনেন। সেখানেই বাড়ি বানিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন।

বছর খানেক আগে ক্যানসার ধরা পড়ে এই বৃদ্ধের। শুরু হয় চিকিৎসা। এর মধ্যেই অসমে নাগরিক পঞ্জিতে বহু নাম বাদ যাওয়ার খবর পেয়ে নিজের ও পরিবারের জন্য পরিচয়পত্রের খোঁজ শুরু করেন। দীপক বলেন, ‘‘কোন্নগরের জমিটা ১৯৮৯ সালে কেনা। কিন্তু আমরা যে তার বহু আগে থেকে এ দেশে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে চলছি, তা প্রমাণ করতে পারে একমাত্র বিক্রি করে দেওয়া পৈত্রিক জমির নথিপত্র। তাই আলিপুরদুয়ারে এসেছি।’’ তাঁদের সেই বাড়ির ইতিমধ্যে মালিকানার হাত বদলও হয়ে গিয়েছে। তাই নথি পেতে ঘুরতে হচ্ছে।

দীপকবাবু আলিপুরদুয়ারে তাঁর পরিচিত প্রবীণদের কাছেও গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “অনেকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। এখন সেই অপেক্ষায় রয়েছি।” এই বৃদ্ধ দম্পতির কথায়, “জমির নথিই তো প্রমাণ। সেটা বের না করে তো বাড়িতেও চুপ করে বসে থাকতে পারব না। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।”

আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক কৃষ্ণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘এনআরসি আতঙ্কে জমির নথি জোগার করতে কেউ হুগলি থেকে আলিপুরদুয়ারে এসেছেন বলে শুনিনি। তা ছাড়া এমন কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। যোগাযোগ করলে, প্রশাসনের করার কিছু থাকলে অবশ্যই করা হবে।’’

Assam NRC West Bengal North Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy