Advertisement
E-Paper

প্রতিবাদী বৃদ্ধকে হেনস্থার নালিশ

তিনি ডান কানে দীর্ঘদিন শুনতে পান না। ইদানীং বাঁ কানেও কম শুনছেন। স্নায়ুর রোগ রয়েছে। কমে গিয়েছে দৃষ্টিশক্তিও।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০৬:৪৪
নিজের ঘরে রবি রায়। নিজস্ব চিত্র

নিজের ঘরে রবি রায়। নিজস্ব চিত্র

তিনি ডান কানে দীর্ঘদিন শুনতে পান না। ইদানীং বাঁ কানেও কম শুনছেন। স্নায়ুর রোগ রয়েছে। কমে গিয়েছে দৃষ্টিশক্তিও।

তবু এই ৭৬ বছর বয়সেও এলাকায় পরিবেশ বা শব্দ দূষণ হতে দেখলেই তিনি প্রতিবাদ করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার শিবরাত্রির একটি শোভাযাত্রায় মাইকের তাণ্ডব রুখতে গিয়ে রীতিমতো হেনস্থার শিকার হলেন কোন্নগরের মাস্টারপাড়ার রবি রায় নামে ওই বৃদ্ধ। ধাক্কা মেরে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে গিয়ে মাইক বন্ধ করে দেয়। তবে, এ ব্যাপারে থানায় কোনও অভিযোগ জানাননি রবিবাবু।

বৃদ্ধ বলেন, ‘‘লাগামহীন শব্দের জন্য আমার ডান কানের শ্রবণ-ক্ষমতা চলে গিয়েছে বলে ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ যে কতটা ক্ষতিকর, নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছি। তাই বৃহস্পতিবার মাইক বন্ধ করতে গিয়েছিলাম। সঙ্গে অবশ্য কাউকে পাইনি। শোভাযাত্রার উদ্যোক্তারা আমার সঙ্গে তর্কাতর্কি করেন। তারপরে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন। আমি পুলিশে ফোন করি। ঘটনাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রকেও জানাই।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সমাজকর্মী রবিবাবু এক সময় বাম রাজনীতি করতেন। এলাকায় পরিবেশ দূষণ রোধে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। প্রোমোটার-রাজের বিরুদ্ধেও তিনি এলাকার প্রতিবাদী মুখ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ শিবরাত্রির একটি শোভাযাত্রা মাস্টারপাড়ায় তাঁর বাড়ির সামনেো এসে থামে। তাতে প্রায় দেড়শো লোক ছিলেন। দু’টি ম্যাটাডর এবং কয়েকটি ছোট গাড়িও ছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলায় মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও ওই ম্যাটাডর থেকে তারস্বরে মাইক বাজছিল।

বাড়ির তিনতলা থেকে কোনও মতে নীচে নেমে রবিবাবু শোভাযাত্রার উদ্যোক্তাদের মাইক বন্ধ করার অনুরোধ করেন। মাইক বন্ধ হয়। কিন্তু এর পরে শোভাযাত্রা একটু এগিয়ে পাড়ার মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। মিছিলের লোকজন খাওয়া-দাওয়া শুরু করেন। তার আধ ঘণ্টা পরে ফের শোভাযাত্রায় মাইক বাজানো শুরু হয়। রবিবাবু ফের সেখানে আসেন। একেবারে ম্যাটাডরের সামনে পথ আগলে দাঁড়িয়ে পড়েন। এর পরেই বৃদ্ধের সঙ্গে শোভাযাত্রার উদ্যোক্তাদের তর্কাতর্কি এবং তার পরে তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ।

এর মিনিট দশেকের মধ্যেই অবশ্য পুলিশ সেখানে যায়। তারপর মিছিলের পথ অনুসরণ করে গিয়ে পুলিশ মাইক বন্ধ করে। শুক্রবার সকালে ফের একটি শোভাযাত্রার মাইক বন্ধের জন্যেও তিনি পুলিশকে জানান। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘দু’দিনই বৃদ্ধ আমাদের জানানোয় পুলিশ গিয়ে মাইক বন্ধ

করে দেয়।’’

বৃহস্পতিবারের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই শোভাযাত্রার উদ্যোক্তারা বয়স্ক মানুষের উপর যা করেছে, অত্যন্ত অন্যায়। উনি অসুস্থ। উনি মাটিতে যে ভাবে পড়ে গিয়েছিলেন, তাতে ওঁর প্রাণহানিও হতে পারত। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় তাঁর বাবা প্রাণের ভয় করেন না বলে জানিয়েছেন রবিবাবুর ছেলে সুমিত। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে পাড়ার পুজোতেই বেলাগাম ভাবে মাইক বাজানো হচ্ছিল বলে বাবা তার ছিঁড়ে দিয়েছিলেন। এ বারের ঘটনা নিয়ে সুমিত বলেন, ‘‘বাবা পরিবেশ সংক্রান্ত অনিয়ম দেখলেই রুখে দাঁড়ান। বাবা বরাবরই প্রতিবাদী। সবাই যদি বাবার মতো হতেন, তা হলে পরিবেশটা অন্তত রক্ষা পেত। কিন্তু আজকাল কেউই কিছু বলেন না।’’

Harassment Elderly Man Sound Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy