Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গোলমাল, গুপ্তিপাড়ায় বন্ধ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই ডিগ্রি কলেজটি গড়ে ওঠে। আভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই কলেজে ডামাডোল চলছে।

প্রতিবাদ: অধ্যক্ষের ঘরের সামনে বসে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের

প্রতিবাদ: অধ্যক্ষের ঘরের সামনে বসে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুপ্তিপাড়া শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৩
Share: Save:

গত দু’মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। সেই কারণেই ক্লাসও নিচ্ছেন না তাঁরা। আর প্রত্যেক সেমেস্টারের টাকা মিটিয়েও ক্লাস করতে না পেরে আন্দোলনে নেমেছেন পড়ুয়ারা। টানা দু’দিন ধরে পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও হয়ে রইলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শেষ পর্যন্ত, অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝোলালেন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বুধবার দিনভর এমন নানা ঘটনায় তেতে রইল গুপ্তিপাড়ার বাঁধাগাছি এলাকার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চত্ত্বর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই ডিগ্রি কলেজটি গড়ে ওঠে। আভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই কলেজে ডামাডোল চলছে। শিক্ষকদের একাংশের দাবি, গত নভেম্বর মাস থেকে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। সেই কারণে তাঁরা কাজ না করার (পেন ডাউন) সিদ্ধান্ত নেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করছেন না। চারটি বর্ষ মিলিয়ে কলেজে প্রায় ১২০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। ক্লাস না হওয়ায় তাঁরা পড়েছেন ফাঁপড়ে। পড়ুয়াদের বক্তব্য, প্রত্যেক সেমিস্টারের টাকা তাঁদের মিটিয়ে দিতে হচ্ছে। তা দিতে দেরি হলে জরিমানাও দিতে হয়। অথচ শিক্ষক এবং কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমস্যার জেরে তাঁদের পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিলই। পরিস্থিতির বদল না হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ পড়ুয়ারা কলেজের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। রাতভর শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেখানে আটকে থাকেন। বুধবারেও সেই তালা খোলেনি। পড়ুয়ারা দাবি জানাতে থাকেন, কলেজের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসে তাঁদের পঠনপাঠন ঠিক ভাবে চালানোর আশ্বাস দিন। তবেই তাঁরা ঘেরাও তুলবেন। অভিযোগ, পড়ুয়াদের দাবি মানা হয়নি। গোলমালের আশঙ্কায় বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বলাগড় থানার ওসি বরুন‌ মিত্র।

এ সবের মাঝেই বিকেলে অধ্যক্ষ অরিন্দম রায়ের সই করা দু’টি নোটিস কলেজে সেঁটে দেওয়া হয়। তার একটিতে লেখা, গত অগস্ট মাস থেকে সৌরীন্দ্রমোহন চৌধুরী ডিরেক্টর হিসেবে কলেজের দেখভাল করছেন না। অপর বিজ্ঞপ্তির নির্যাস— অনিবার্য পরিস্থিতির জন্য বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পড়ুয়ারা যেন কলেজ ক্যাম্পাস এবং হস্টেল ছেড়ে দেন।

ঝোলানো হয়েছে কলেজ বন্ধের নোটিস।

কলেজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দেখে পড়ুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় বিডিও সমিত সরকার এবং ওসি বরুণবাবু ঘেরাও হয়ে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছাত্রদের বক্তব্যও শোনেন। তাঁদের ঘেরাও তুলে নেওয়ার আর্জি জানান তাঁরা। কিন্তু আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা তা মানতে চাননি। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, কয়েকশো ছাত্র কলেজের বাইরে বসে রয়েছেন। ভিতরে বিডিও-র সঙ্গে শিক্ষকদের আলোচনা চলছে। তবে চেষ্টা করেও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই কলেজে দু’টি সংস্থার মালিকানা রয়েছে। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ কলেজে আসেননি। বিডিও বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা সমাধানের।’’

পরিস্থিতি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বেজায় ক্ষুব্ধ। দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের বক্তব্য, ‘‘কলেজের প্রশাসনিক সমস্যার ফল আমাদের কেন ভুগতে হবে? একটার পর একটা দিন চলে যাচ্ছে, অথচ শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন না। এটা কি চলতে পারে!’’ চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র বলেন, ‘‘কলেজ বন্ধ করে আমাদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হচ্ছে। এটা আমরা মানছি না। কারও সঙ্গে আমাদের বৈরিতা নেই। আগে ক্লাস চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হোক।’’

নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Engineering College college
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE