Advertisement
E-Paper

প্ল্যাটফর্মে হকার-রাজ

আবার কোথাও এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন রিকশা, সাইকেল, টোটোর দিকে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৭
চুঁচুড়া স্টেশনে ফলের বিকিকিনি।

চুঁচুড়া স্টেশনে ফলের বিকিকিনি।

পূর্ব রেল হোক বা দক্ষিণ পূর্ব— হাও়়ড়া থেকে বর্ধমান বা খড়্গপুর শাখার যে কোনও স্টেশনেই হকার সমস্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, কোথাও প্ল্যাটফর্মের উপর ঝাঁকা নিয়ে বসে ফল, আনাজের বাজার। কোথাও প্ল্যাটফর্মে ওঠার মুখে বাজার বসে, রাস্তা প্রায় বুজে গিয়েছে। আবার কোথাও এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন রিকশা, সাইকেল, টোটোর দিকে।

পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান মেন শাখা এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলে হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় আরপিএফ এবং রেল পুলিশের হাতেই নিত্যযাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব। রেল সম্পত্তি, জমি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রেল পুলিশের উদাসীনতার ফলেই প্ল্যাটফর্ম বা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা দখল করে চলছে ব্যবসা। নিত্যযাত্রীদের অনেকেই দাবি করেছেন, সকাল বিকেল বাজার বসায় অফিস যাওয়া বা ফেরার সময় ট্রেন থেকে নেমে সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। বাজারের ভিড় ঠেলে পৌঁছতে হয় গন্তব্যে।

আবার হকারদের একাংশের দাবি, তাঁরা রেল পুলিশকে ‘চাঁদা’ দিয়েই ব্যবসা করেন। যদিও গত কয়েক বছর ধরে রেল হকারদের কোনও রকম লাইসেন্স দেয়নি বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ।

হিন্দমোটর এলাকার বাসিন্দা সৈকত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্ল্যাটফর্মে ওঠার সিঁড়ি যেখানে শুরু হচ্ছে, তার দু’পাশে বাজার বসে। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সাইকেলে বা রিকশায় ট্রেন ধরতে গেলে সেখান দিয়ে যাওয়া যায় না। আবার হেঁটে গেলেও বিপত্তি। তখন সাইকেল রিকশার হাতলে ধাক্কা খেয়ে কত বার যে হাত কেটেছে!’’ এ ভাবে যেতে গিয়ে অনেক সময়ই চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায় ট্রেন। অনেকে আবার পড়ি-কি-মরি ছুটে ট্রেন ধরতে যান, ফলে ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে হামেশাই। একই সমস্যা বালি এবং বেলুড় স্টেশনে। সেখানেও ট্রেন ধরতে যাওয়ার পথ জুড়ে বসে বাজার। বেলুড় স্টেশনের আন্ডারপাসে প্রায় সারা বছর জমে থাকে জল। অটো, টোটো, ম্যাজিক গাড়ির ভিড় ঠেলাঠেলি তো রয়েছেই।

সমস্যা কম নয় উত্তরপাড়া স্টেশনেও। সেখানে আবার ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপর বসে ফলের দোকান। ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গেলে পাওয়া যাবে নকল গয়নাগাটি। শ্রীরামপুর স্টেশনে আবার প্ল্যাটফর্মের উপরেই বসে একের পর এক চায়ের দোকান। আকৃতিতে তারা প্রায় এক একটি ছোটখাট রেস্তোরাঁ যেন! চা, বিস্কুট, কেক, ডিম-পাঁউরুটির পসরা, ক্রেতার বসার ব্যবস্থা সবই রয়েছে।

রিষড়া স্টেশনে আনাজ নিয়ে বসেন এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘দশ দিন অন্তর পুলিশকে মোটা টাকা দিতে হয়। রেলের জমিতে না ব্যবসা করলে খাব কী?’’ অনেক যাত্রীও সমর্থন করেন ব্যবসায়ীদের। উত্তরপাড়ায় রেলের জমিতে বাজার বসে। স্থানীয় বাসিন্দা আরতি সাহা বলেন, ‘‘সুবিধা আমাদেরও। কলেজ স্টিটে অফিস আমার। সন্ধেবেলা ট্রেন থেকে নেমেই বাজার সেরে নিই। তারপর রিকশায় উঠে বাড়ি। ঝামেলা নেই।’’ অনেকেই বলছেন, মানুষ কিনছেন বলেই তো হকাররা বসছে।

হাওড়া রেল পুলিশ সুপার নীলাদ্রি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেল পুলিশ নিয়ম করে অভিযান চালায়। কিন্তু কিছুদিন পর ওঁরা ফের বসে পড়েন। অভিযান আমরা ধারাবাহিক ভাবে চালাই।’’ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তীও একই সুরে বলেন, ‘‘আরপিএফ ও রেল পুলিশ নিয়ম করে অভিযান চালায়, মামলা হয়। ধড়পাকড় হয়। কিছুদিন বন্ধ থাকে। ফের ওঁরা আবার বসে যান।’’ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষও বলেন, ‘‘বেআইইনি হকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রেল পুলিশের হাতে পর্যাপ্ত আইন আছে। জরিমানাও করা হয় নিয়মিত।’’

কেন ফাঁকা করা যায় না রেলের জমি? রেল আধিকারিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, আসলে এর সঙ্গে বহু মানুষের রুটি রুজি জড়িত। তাই রেল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই না দেখার ভান করেন।

Hawker Rail Indian rail
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy